শামীমার সঙ্গে প্রেম ছিল আশরাফুল ও জরেজুলের

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:০৯
শেয়ার :
শামীমার সঙ্গে প্রেম ছিল আশরাফুল ও জরেজুলের

রাজধানীর হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের পাশে দুটি ড্রামে ভর্তি খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় মূল আসামি মোহাম্মদ জরেজুল ইসলামকে (৩৯) গ্রেপ্তারসহ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। শনিবার (১৫ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, নিহত আশরাফুল হক (৪৪) দিনাজপুরের হিলি বন্দরের একজন পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী। গত মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাতে আশরাফুল রংপুর থেকে বন্ধু জরেজুলকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। ঢাকায় পৌঁছানোর পর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শাহবাগ থানা পুলিশ জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে দুটি ড্রাম থেকে ছাব্বিশ টুকরা খণ্ডিত একটি মরদেহ উদ্ধার করে। পরে আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে পুলিশ তার পরিচয় নিশ্চিত হয় এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আশরাফুলের বোন মর্গে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করেন এবং এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপি ডিবি ছায়া তদন্ত আরম্ভ করে এবং ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় জড়িতদের অবস্থান শনাক্ত করে। একপর্যায়ে শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত মোহাম্মদ জরেজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। তার দেখানো মতে সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাপাতি এবং ভাড়া করা বাসা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত স্কচটেপ ও হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়।

 

ঘটনা সম্পর্কে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত  কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারকৃত জরেজুল ইসলাম একজন মালয়েশিয়া প্রবাসী। অনুমান দেড় মাস আগে তিনি দেশে আসেন। বিদেশে থাকাকালে জরেজুল ইসলামের সঙ্গে ‘বিগো লাইভ’ অ্যাপের মাধ্যমে কুমিল্লা জেলার শামীমা ইসলাম নামে এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। জরেজুল ইসলাম দেশে ফেরার পর তার স্ত্রী বিষয়টি জানতে পারলে তাদের মধ্যে পারিবারিক মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়।

জরেজুলের স্ত্রী বিষয়টি জানতে পেরে জরেজুল ইসলামের বন্ধু আশরাফুলকে শামীমার মোবাইল নম্বর দেন তার বন্ধু জরেজুল ইসলামকে এসব থেকে নির্বৃত্ত করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু আশরাফুল নিজেই একপর্যায়ে শামীমার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

প্রাথমিকভাবে জানা যায়, আশরাফুল তার বন্ধুকে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে জাপান পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন, তার মধ্যে শামীমাকে ৭ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। মূলত এই টাকার সংস্থান এবং শামীমার সঙ্গে একান্তে দেখা করার আশায় দুই বন্ধু একসঙ্গে রংপুর থেকে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় তিনজন একত্রে দেখা করার জন্য একটি নিরাপদ স্থান খোঁজ করছিলেন। পরে তিনজনের পরিকল্পনায় তারা ডেমরা থানাধীন ব্যাংক কলোনি এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেয় এবং একইদিন দুপুর আড়াইটার দিকে বাসায় ওঠে তিনজন মিলে সেই বাসা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন।

স্থানীয় বাজার থেকে তারা একটি তোশক, তিনটি বালিশ ও জানালার পর্দা কেনেন। পরস্পর সম্মতিতে তারা একে অপরের সাথে শারীরিক মেলামেশা করেন। তবে আশরাফুল শামীমার সঙ্গে অস্বাভাবিক পথে যৌনকর্ম করতে চাইলে শামীমা তাতে বাধা দেন।  এতে করে দুজনের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয় এবং শামীমা কান্নাকাটি শুরু করলে জরেজুল বিষয়টি নিয়ে বন্ধুর ওপর হঠাৎ ক্ষিপ্ত হন। আশরাফুল শামীমাকে জোরাজুরি করার একপর্যায়ে শামীমা কৌশলে আশরাফুলের হাত বেঁধে অস্বাভাবিক পথে মেলামেশা করতে প্রলুব্ধ করে। 

আশরাফুল এরপর অস্বাভাবিক পথে যৌনকর্ম শুরু করলে ক্ষিপ্ত জরেজুল প্রথমে আশরাফুলকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেন। এতে আশরাফুল ডাক-চিৎকার শুরু করলে শামীমা তার ওড়না এবং সঙ্গে থাকা স্কচটেপ দিয়ে আশরাফুলের মুখ বেঁধে দেন। এভাবে মুখ বাঁধা থাকায় এবং জরেজুল ইসলামের আঘাতে একপর্যায়ে আশরাফুল মারা যান।

আশরাফুল মারা গেলে দুজনে চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং মরদেহ গুম করার উপায় খুঁজতে থাকেন। বুধবার (১২ নভেম্বর) সারারাত তারা লাশের সাথেই একই বাসায় অবস্থান করে এবং বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে জরেজুল ইসলাম ও শামীমা দুজনে পরিকল্পনা করে মরদেহ গুম করার জন্য বাজার থেকে দুইটি প্লাস্টিকের ড্রাম, পলিথিন ও লাশ কাটার জন্য স্থানীয় দোকান থেকে একটি চাপাতি কিনে আনেন।

বাথরুমের পানির ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে জরেজুল ইসলাম মরদেহটি কেটে টুকরা করে শামীমার সহায়তায় ড্রামে ভরেন। শামীমা তখন বাইরে গিয়ে একটি সিএনজি ভাড়া করে আনে এবং দুজনে সিএনজিতে করে লাশের ড্রামসহ বেরিয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের পাশে ফুটপাতে তারা মরদেহভর্তি ড্রাম দুইটি রেখে দ্রুত বাসায় ফিরে যান। বাসায় ফিরে দুজনে বাসার সব মালামাল নিয়ে বের হয়ে যান। শামীমা কুমিল্লার দিকে রওনা হয়, জরেজ রংপুর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু একপর্যায়ে জরেজুল সিদ্ধান্ত বদল করে কুমিল্লায় তার এক বন্ধুর বাসায় গেলে সেখান থেকে ডিএমপি ডিবি তাকে গ্রেপ্তার করে।