শিশুর ডেঙ্গুজ্বর হলে যা করতে হবে

ডা. মো. আতিকুর রহমান
১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৭
শেয়ার :
শিশুর ডেঙ্গুজ্বর হলে যা করতে হবে

ডেঙ্গুজ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা ডেঙ্গু ভাইরাস (DENV) দ্বারা সংক্রামিত এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এটি সরাসরি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রমিত হয় না। সাধারণত প্রাথমিক সংক্রমণের লক্ষণ হালকা হলেও ডেঙ্গু ভাইরাসের ভিন্ন স্ট্রেইনের মাধ্যমে পরবর্তী সংক্রমণ মারাত্মক জটিলতা তৈরি করতে পারে।

ডেঙ্গু বাহক এডিস মশা অন্যান্য মশা থেকে কিছুটা ভিন্ন। এদের শরীর ও পায়ে সাদা-কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। আকারে ছোট হলেও এদের শরীরে বাদ্যযন্ত্র ‘বীণা’র মতো চিহ্ন দেখা যায়। এই মশাগুলো দিনের বেলা, বিশেষ করে সকাল ও সন্ধ্যার আগে কামড়ায় এবং পরিষ্কার, স্থির পানিতে, যেমন- ফুলের টব, অব্যবহৃত টায়ার বা অন্যান্য পাত্রে জমে থাকা পানিতে বংশবিস্তার করে। তাই এসব স্থান পরিষ্কার রাখা এবং পানি জমতে না দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে সাধারণত সংক্রমণের ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে যে উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে তা হলো- উচ্চ জ্বর (104°F বা 40°C পর্যন্ত), প্রচণ্ড মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, জয়েন্ট ও পেশিতে ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি, ফোলা লসিকা গ্রন্থি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি।

কখনও কখনও ডেঙ্গু গুরুতর রূপ নেয়, যাকে গুরুতর ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বলা হয়। এতে রক্তপাত, প্লাজমা লিকেজ, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। গুরুতর ডেঙ্গুর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- তীব্র পেটব্যথা, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্ত পড়া, ক্লান্তি ও অস্থিরতা, মলের সঙ্গে রক্ত, অচেতন হয়ে যাওয়া।

ডেঙ্গুজ্বর সন্দেহ হলে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। চিকিৎসক প্রয়োজনে আরও কিছু পরীক্ষা লিখে দিতে পারেন। ডেঙ্গুজ্বরের নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। তবে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করা হয়। যেমন-

পানি ও তরল গ্রহণ : প্রচুর পরিমাণে পানি, ডাবের পানি, ওরস্যালাইন, ফলের রস ইত্যাদি খেতে হবে, যাতে শরীরে পানিশূন্যতা না হয়।

জ্বর নিয়ন্ত্রণ : প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। তবে অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেনজাতীয় ওষুধ পরিহার করা উচিত। কারণ এগুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

সম্পূর্ণ বিশ্রাম : শরীরের পুনরুদ্ধারের জন্য যথাযথ বিশ্রাম প্রয়োজন। যদি ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে পরিণত হয়, তবে অবিলম্বে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। এমন অবস্থায় শরীরে রক্তে প্লাটিলেট বিপজ্জনকভাবে কমে গেলে প্রয়োজনে রক্ত বা প্লাজমা দিতে হবে এবং স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় সাপোর্টিভ চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

যা করা যাবে না : চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না। মশার কামড় থেকে সুরক্ষা ছাড়া থাকা যাবে না। কারণ এতে অন্যদের সংক্রমণ ঘটতে পারে। শরীরে পানিশূন্যতা হতে দেওয়া যাবে না।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা : মশা থেকে রক্ষা পেতে মশারি ব্যবহার করুন। ঘরে নিয়মিত মশার স্প্রে ব্যবহার করুন। ফুলের টব, টায়ার, ক্যান বা পাত্রে জমে থাকা পানি ফেলে দিন ও পরিষ্কার রাখুন। ফুলহাতা জামা-কাপড় পরিধান করুন। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করুন, যাতে ভাইরাসটি অন্যদের মধ্যে ছড়াতে না পারে।

লেখক : শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

চেম্বার : আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬, ঢাকা

হটলাইন : ১০৬৭২, ০৯৬১০১০০৯৯৯