বাণিজ্য উপদেষ্টার হুশিয়ারিতেও দাম কমেনি পেঁয়াজের
চলতি মাসের শুরু থেকে পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে বেড়ে ১২০ টাকায় পৌঁছেছে। প্রয়োজনীয় এ পণ্যটির বাজারে হঠাৎ এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে বেকায়দায় পড়েছেন ভোক্তারা। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিনও বলেছেন, দেশে প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে দাম না কমলে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে। কিন্তু তাঁর হুশিয়ারির পরও বাজারে দাম কমেনি। বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই।
গত ৯ নভেম্বর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বাজারে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছি। দেশে প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ উঠবে। তার পরও যদি আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে দাম না কমে, তা হলে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে আর অনুমতি দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, পেঁয়াজ আমদানি করতে ইচ্ছুক ২ হাজার ৮০০ জনের আবেদন আছে মন্ত্রণালয়ে। এর ১০ শতাংশকেও যদি পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়, তা হলে বাজারে ধস নামবে। আমরা ধস নামাতে চাই না। দাম একেবারে কমে গিয়ে কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য সরকার পর্যবেক্ষণ করছে।
গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। দুই সপ্তাহ আগে যা ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে বাজারে আসা নতুন পেঁয়াজ কলি প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
পেঁয়াজের বাড়তি দামের পেছনে পাইকারি বিক্রেতারা নানা কারণ দেখালেও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, কিছু মধ্যস্বত্বভোগী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এ সময়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম যেখানে ৯০ টাকার মধ্যে থাকার কথা, সেখানে বিক্রি হচ্ছে অনেক বেশি দামে। অথচ পাশের দেশে পেঁয়াজের দাম এখন প্রায় ৩০ টাকার মধ্যে রয়েছে। তাই কমিশনের পক্ষ থেকে সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানির জন্য দ্রুত অনুমতি দিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
কদমতলী এলাকার খুচরা বিক্রেতা মো. ইসমাইল ও হাবিবুর রহমান বলেন, শ্যামবাজার পাইকারি বাজারে এখনও দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তাই খুচরাতেও আগের দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। আড়তদাররা বলছেন- নতুন পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত দাম কমবে না। আমদানি করা পেঁয়াজও পর্যাপ্ত নেই।
শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ আড়তে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১০৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বড় সাইজের পেঁয়াজ ২ থেকে ৪ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছু আড়তে নিম্নমানের ছোট পেঁয়াজ ৯৭ থেকে ৯৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
এখানকার পাইকাররা জানান, একদিকে মৌসুমের শেষ, আরেকদিকে আমদানিও কম। তা ছাড়া বৃষ্টিতে কিছু পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন দাম বাড়তি। মাসখানেকের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ উঠলে দাম কমে আসবে বলে আশা করছেন তাঁরা। এ ছাড়া আমদানি বাড়লেও দাম কিছুটা কমে আসবে বলে মনে করেন পাইকাররা।
তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবছর মৌসুম শেষের দিকে এসে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়ে যায়। নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় ব্যবসায়ীদের মাঝে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কৃষকের কাছ থেকে কম দামে কেনা পেঁয়াজ অনেক বেশি দামে বিক্রি করে মধ্যস্বত্বভোগীরা। এবার দেরিতে হলেও এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
বাংলাদেশ কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশনের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন আমাদের সময়কে বলেন, এবার উৎপাদন ও মজুদ সন্তোষজনক। তা ছাড়া কিছুদিন পরই নতুন পেঁয়াজ উঠবে। এমন সময় বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে অতিরিক্ত মুনাফা করার কারসাজি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ায় কৃষকরা তো আর লাভবান হচ্ছেন না। উল্টো অসাধুদের পকেট ভারি হচ্ছে। ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অতীতেও এমন হয়েছে, এখনও হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছেন না ভোক্তা। বাজার মনিটরিং জোরদার ও অসাধুদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।