ওয়াসার এমডি হলেন আব্দুস সালাম ব্যাপারী

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫২
শেয়ার :
ওয়াসার এমডি হলেন আব্দুস সালাম ব্যাপারী


ঢাকা ওয়াসা নিয়ে বিতর্ক ছাড়ছেই না। আওয়ামী লীগ শাসনামলে দীর্ঘ সময় ধরে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। তাঁর নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও বিতর্কিতভাবে বিধি পরিবর্তন করে এমডি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সংস্থার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সালাম ব্যাপারীকে। তাঁকে এই পদে নিয়োগ দিতে বিধি পরিবর্তন করা হয় এবং অন্যান্য যোগ্য প্রার্থীদের সুযোগ না দিতে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে একমাত্র যোগ্য প্রার্থী করা হয় তাকে। এ নিয়ে ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাঁকে তিন বছরের জন্য এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের পানি সরবরাহ অনুবিভাগ থেকে জারি করা ওই আদেশে বলা হয়েছে, যোগদানের তারিখ থেকে আগামী তিন বছরের জন্য আব্দুস সালামকে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ প্রদান করা হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে অবিলম্বে জারিকৃত এই আদেশ কার্যকর হবে।

এদিকে নিয়োগের এই সিদ্ধান্তে ওয়াসার ভেতরে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশের মধ্যে নতুন করে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা জানান, পুরো প্রক্রিয়াই ছিল পরিকল্পিত। একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বসানোর জন্য আট মাস ধরে ধাপে ধাপে নিয়ম ভেঙে পথ তৈরি করা হয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় চলতি বছরের ২১ মার্চ। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিজ্ঞ প্রার্থীদের জন্য বয়সসীমা শিথিলযোগ্য হবে অর্থাৎ ৬০ বছরের বেশি বয়স হলেও আবেদন করা যাবে। পাশাপাশি আবেদনকারীদের ন্যূনতম তৃতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা হতে হবে। কিন্তু সেই সময় আব্দুস সালাম ছিলেন চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা অর্থাৎ তিনি আবেদন করার যোগ্য ছিলেন না।

মাত্র তিন দিনের মাথায়, ২৩ মার্চ ওয়াসা আবার নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে বয়সসীমা শিথিলের বিধান বাদ দিয়ে বলা হয়, আবেদনকারীর বয়স ৬০ বছরের বেশি হলে আবেদন করা যাবে না। ওয়াসার অভ্যন্তরীণ সূত্রের ভাষ্য, এই পরিবর্তন আনা হয় একমাত্র আব্দুস সালামকে সুবিধা দেওয়ার জন্য। কারণ, বয়স শিথিলযোগ্য থাকলে তাঁর চেয়ে যোগ্য ও অভিজ্ঞ প্রার্থী অনেকে আবেদন করতেন।

এরপর নিয়োগের প্রক্রিয়া হঠাৎ স্থগিত রাখা হয়। এরই মধ্যে আব্দুস সালাম ব্যাপারীকে দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করা হয় এবং তাঁকে প্রধান প্রকৌশলীর (চলতি দায়িত্ব) পদ দেওয়া হয়। এরপর তৃতীয়বারের মতো নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় গত ১৫ জুলাই। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যোগ্য প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে সাক্ষাৎকারের জন্য আহ্বান জানানো হবে।

ওয়াসা সূত্র জানায়, এমডি পদে ৩৭ জন আবেদন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন পানিসম্পদ বিষয়ে পিএইচডিধারী অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলীসহ অনেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তা। কিন্তু ওয়াসা তাঁদের কাউকেই সাক্ষাৎকারে ডাকেনি।

এর পরিবর্তে ওয়াসার ‘কর্মসম্পাদন সহায়তা কমিটি’ সরাসরি তিনজনের নাম চূড়ান্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। ওই তালিকায় আব্দুস সালামকে রাখা হয় প্রথমে, ঢাকা ওয়াসার সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানকে দ্বিতীয় স্থানে ও এলজিইডির সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এনামুল হককে তৃতীয় স্থানে। পরে মন্ত্রণালয় সেই তালিকাই হুবহু প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো হয়।