দুদকে জনবল নিয়োগে বেড়েছে তদবির-প্রতারণা

তাবারুল হক
১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০:০৪
শেয়ার :
দুদকে জনবল নিয়োগে বেড়েছে তদবির-প্রতারণা

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। সহকারী ও উপসহকারী পরিচালক, কনস্টেবল, কোর্ট পরিদর্শক, সহকারী পরিদর্শক, হিসাবরক্ষক, ক্যাশিয়ার, অফিস সহায়ক পদে ১৮৬ জনকে নিয়োগের লক্ষ্যে লিখিত, মৌখিক, শারীরিকসহ বিভিন্ন পরীক্ষা সম্পন্ন করছে দুদক। এসব পরীক্ষায় অংশ নিতে কয়েক লাখ প্রার্থী আবেদন করেছেন।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির এসব নিয়োগ প্রক্রিয়া চলার মধ্যে বেড়েছে তদবির ও প্রতারণা। তদবিরের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে কোনো কোনো প্রার্থীকে প্রলুব্ধ করে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এদিকে দুদকে তদবির করা থেকে বিরত বা নিরুৎসাহিত করতে সংস্থাটির প্রবেশ পথে একটি পোস্টার সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে- ‘চাকরির জন্য তদবিরই অযোগ্যতা’।

এর মধ্যে গত বুধবার মাফতুল হোসেন নামে এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে দুদক। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিজেকে ‘জেনারেল আকবর’ নামে ভুয়া পরিচয় দিয়ে ফোনে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে কনস্টেবল পদে তাঁর প্রার্থীদের জন্য অবৈধ তদবির করেন।

জানা যায়, গত ৬ আগস্ট একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দুদক। এতে ১৭ গ্রেডে ৯১টি পদে কনস্টেবল এবং ২০ গ্রেডে ১০টি পদে অফিস সহায়ক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়। কনস্টেবল পদে প্রায় এক লাখ আবেদন জমা পড়ে। গত ৩১ অক্টোবর লিখিত (এমসিকিউ) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এখন মৌখিক ও শারীরিক পরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে। আর ১০টি অফিস সহায়ক পদের জন্য প্রায় ১৪ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। ১৪ নভেম্বর এ পদের লিখিত (এমসিকিউ) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া গত ৮ সেপ্টেম্বর আরেকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দুদক। এতে সহকারী পরিচালক পদে (গ্রেড-৯) ২০ জন, উপসহকারী পরিচালক পদে (গ্রেড-১০) ৫০ জন, কোর্ট পরিদর্শক পদে (গ্রেড-১০) ৩ জন, সহকারী পরিদর্শক (গ্রেড-১১), হিসাবরক্ষক (গ্রেড-১১) ও ক্যাশিয়ার পদে (গ্রেড-১৬) ১ জন করে নিয়োগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব পদে প্রায় দেড় লাখ আবেদন জমা পড়েছে।

দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, দুদকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় লিখিত পরীক্ষা তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে স্বচ্ছতার সাথে গ্রহণ করা হয়। এমসিকিউ পরীক্ষা যেদিন অনুষ্ঠিত হয়, সেইদিনই ফল আমাদের হাতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সেসব প্রার্থীর মৌখিক ও শারীরিক পরীক্ষা গ্রহণ শেষ স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

তিনি বলেন, এখন যে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি চক্র চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে প্রার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আবার কিছু ব্যক্তি নিজেদের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য তদবির করে যাচ্ছে।

গ্রেপ্তার হওয়া মাফতুল হোসেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ছিলেন। বিভিন্ন অভিযোগে তাঁকে সেখান থেকে বরখাস্ত করা হয়। গত ৪ নভেম্বর মিরপুরের একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তারের সময় তারিখবিহীন ও স্বাক্ষরযুক্ত প্রার্থীদের ৯ লাখ টাকার একাধিক ব্যাংক চেক, কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষার এডমিট কার্ড জব্দ করা হয়।

মাফতুলকে গ্রেপ্তারের পর দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, এ চক্রে আরও লোক থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সব চাকরি প্রার্থীকে প্রতারকচক্র থেকে সতর্ক থাকতে এবং সব আর্থিক লেনদেন থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।

দুদক ২০২২ সালে নতুন ১৪টি সমন্বিত জেলা কার্যালয় চালু করে। নতুন কার্যালয় চালু করে তখন বড় নিয়োগ দেওয়া হয় দুদকে। ওই বছর ৪০৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ১১৪ জন সহকারী পরিচালক এবং ১৩৭ জন উপসহকারী পরিচালক। এ ছাড়া ১০৯ জন কনস্টেবল, আটজন আদালত পরিদর্শক ও ১৪ জন গাড়িচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই বছর আরও ১৩২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদোন্নতি হয়।

এরপর ২০২৩ সালে কয়েকটি পদে সীমিত সংখ্যক নিয়োগ দেওয়া হলেও ২০২৪ সালে কোনো কর্মী নিয়োগ দেয়নি সংস্থাটি। সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সপ্তম কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরের মাথায় নতুন করে জনবল পাচ্ছে দুদক।