সেই পুরনো ছক, প্রত্যাশা বাস্তবতায় বিস্তর ফারাক

লুৎফর রহমান কাকন
১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:১১
শেয়ার :
সেই পুরনো ছক, প্রত্যাশা বাস্তবতায় বিস্তর ফারাক

দেশের অভ্যন্তরীণ তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংকট নিরসনে নতুন অনুসন্ধানে জোর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেও প্রত্যাশা ও বাস্তবতার মধ্যে এখনও বড় ফারাক রয়ে গেছে।

দেশের শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, সারকারখানা ও সামগ্রিক অর্থনীতির অগ্রগতির জন্য বিপুল গ্যাস চাহিদা তৈরি হয়েছে। কিন্তু দেশীয় উৎস থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী জোগান মিলছে না। ফলে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানিই এখন একমাত্র ভরসা। তবু সরকার বলছে, দেশীয় উৎসে অনুসন্ধান কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে, যদিও মূল জোর দেওয়া হচ্ছে আমদানি পরিকল্পনাতেই।

বাংলাদেশ তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বিগত সময়ের রেখে যাওয়া পরিকল্পনার কিছু অংশ কাটছাঁট করে বাস্তবায়ন করা ছাড়া আমাদের বিকল্প নেই। যেমন করেই হোক, নতুন নতুন স্থানে অনুসন্ধান ও উত্তোলন শুরু করতে হবে। আগের সরকারের ১০০ কূপ খননের পরিকল্পনাই এখন বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছিল, এখন তা অনেকটা কমেছে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে ৫০টি এবং ২০২৬-২০২৮ সালের মধ্যে আরও ১০০টি কূপ খনন ও ওয়ার্কওভার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বাপেক্স জামালপুর-১ অনুসন্ধান কূপে ব্লক-৮ এলাকায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে। সেখানে রিজার্ভের পরিমাণ মূল্যায়নে আরও

দুটি কূপ খননের (একটি উন্নয়ন, একটি অনুসন্ধান) পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দুটি কূপ খননের জন্য উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা (ডিপিপি) প্রণয়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

এ ছাড়া সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের (এসজিএফএল) হরিপুর গ্যাস ফিল্ডে সিলেট-১০ কূপ এলাকায় জ্বালানি তেল প্রাপ্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন সম্ভব কি না, তা যাচাইয়ে সিলেট-১২ কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দেশের বৃহত্তম দ্বীপ ভোলায় গ্যাসের মজুদ আরও বাড়ার সম্ভাবনা থাকায় সেখানে ১৯টি নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা চলছে। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল)-এর আওতায় তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রে ২টি এবং বাপেক্সের আওতায় শ্রীকাইল গ্যাস ফিল্ড ও মোবারকপুর স্ট্রাকচারে ২টিসহ মোট ৪টি গভীর কূপ খননের কার্যক্রম চলছে।

বাপেক্স, বিজিএফসিএল ও এসজিএফএল নিজ নিজ ব্লকে নতুন লিড ও প্রসপেক্ট চিহ্নিত করতে সাইসমিক ডেটা আহরণ ও বিশ্লেষণ কার্যক্রমও চালাচ্ছে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাপেক্সের নিজস্ব ৫টি রিগ ও চুক্তিভিত্তিক ঠিকাদারের ৩টি রিগসহ মোট ৮টি রিগ দিয়ে কাজ চলছে। চলতি মাসের ২৭ তারিখ থেকে তিতাস-২৮ উন্নয়ন কূপ খনন শুরু হবে। আগামী জানুয়ারিতে তিতাস-৩১ গভীর কূপ খনন শুরু করার পরিকল্পনাও রয়েছে। ভোলা এলাকায় ৫টি কূপ খননের প্রস্তুতিও নিচ্ছে বাপেক্স।

পেট্রোবাংলার আরেক কর্মকর্তা বলেন, চলতি মাসের ২৭ তারিখ থেকে টার্ন কি পদ্ধতিতে নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক ঠিকাদারের রিগ দিয়ে তিতাস-২৮ উন্নয়ন কূপ খনন শুরু হবে। আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে বিজিএফসিএল-এর সঙ্গে টার্ন কি পদ্ধতিতে নিয়োজিত ঠিকাদারের ১টি রিগ দিয়ে তিতাস-৩১ গভীর কূপ খনন শুরু হবে। এ ছাড়াও ভোলা এলাকায় ৫টি কূপ খননের পরিকল্পনা করছে বাপেক্স। টার্ন কি পদ্ধতিতে নিয়োজিত ঠিকাদারদের রিগ দিয়ে ভোলা এলাকায় কূপ খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ কর্মকর্তা বলেন, আশা করা যাচ্ছে ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে বাপেক্সের ৫টি রিগ এবং টার্ন কি পদ্ধতিতে নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক ঠিকাদারের ৬টি রিগসহ মোট ১১টি রিগ দিয়ে মোট ১১টি কূপের খনন ও ওয়ার্কওভার কাজ শুরু করা যাবে।

সরকার ইতোমধ্যে বাপেক্সের জন্য আরও ২টি নতুন রিগ ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পেট্রোবাংলার আশা, এসব কার্যক্রম সম্পন্ন হলে প্রতিদিন ১৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যোগ হবে জাতীয় গ্রিডে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশের দৈনিক গ্যাসচাহিদা প্রায় ৫ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। বিদেশ থেকে আমদানি করা এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজিসহ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হচ্ছে সর্বোচ্চ ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে গ্যাস সংকটে দেশের শিল্পকারখানাগুলো প্রায় অচল হয়ে পড়েছে, নতুন বিনিয়োগও স্থবির হয়ে আছে।