মস্তিষ্কে টিউমার মানেই কি ক্যানসার?
মস্তিষ্কে টিউমার মানেই ক্যানসার আমাদের অনেকের মধ্যেই এমন ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান। কিন্তু এমন ধারণা মোটেই ঠিক নয়। কারণ সব ধরনের টিউমার ক্যানসার সৃষ্টি করে না। টিউমার বলতে বোঝায় শরীরের কোনো অংশে অস্বাভাবিকভাবে টিস্যুর একটি পিণ্ড তৈরি হওয়া, যার কোষ স্বাভাবিক কোষের তুলনায় দ্রুত, অনিয়ন্ত্রিত ও সমন্বয়হীনভাবে বৃদ্ধি পায়। কোষের প্রকৃতি ও আচরণ অনুসারে টিউমারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এর একটি হলো বিনাইন এবং আরেকটির নাম ম্যালিগন্যান্ট। বিনাইন টিউমার সাধারণত অক্ষতিকর ও ধীরগতিতে বৃদ্ধি পায়। এটি একটি নির্দিষ্ট আবরণ বা ক্যাপসুল দ্বারা বেষ্টিত থাকে। ফলে টিউমারের কোষ শরীরের আশপাশের টিস্যু বা অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে যেতে পারে না। সময়মতো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এ ধরনের টিউমার সম্পূর্ণভাবে অপসারণ করা সম্ভব এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগী পরবর্তী সময় সম্পূর্ণ সুস্থ জীবন যাপন করতে পারেন। তবে কখনও কখনও টিউমারের অবস্থান মস্তিষ্কের সংবেদনশীল অংশে হলে তা চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ফলে মাথাব্যথা, দৃষ্টিবিভ্রম বা চলাফেরার অসুবিধা হতে পারে। তবু এসব টিউমারকে ক্যানসার বলা হয় না। কারণ এগুলো শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে না।
অন্যদিকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার অত্যন্ত বিপজ্জনক। এটি কোনো আবরণ দ্বারা বেষ্টিত থাকে না। ফলে এর বৃদ্ধি হয় দ্রুত। অনিয়ন্ত্রিতভাবে এটি আশপাশের টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে বা রক্তের মাধ্যমে শরীরের অন্য অংশেও বিস্তার লাভ করে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারই হলো ক্যানসার। শরীরের অন্য অঙ্গে, যেমন ফুসফুস, থাইরয়েড, খাদ্যনালি, কিডনি বা নারীর ক্ষেত্রে স্তনে ক্যানসার হলে অনেক সময় তা রক্ত বা লসিকা প্রবাহের মাধ্যমে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যেতে পারে। একে বলে মেটাস্টাটিক টিউমার। আবার মস্তিষ্কের নিজস্ব ক্যানসারও আছে এবং তা মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। দ্রুত বৃদ্ধি পায়। মস্তিষ্কে ক্যানসার হলে সাধারণভাবে ক্ষুধামন্দা, বমিভাব, রক্তশূন্যতা, অল্প সময়ে ওজন কমে যাওয়া ও দুর্বল হয়ে পড়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। বিশেষভাবে দেখা দিতে পারে প্যারালাইসিস, কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া, তীব্র মাথাব্যথা, বমি, ঘনঘন খিঁচুনি ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা। মস্তিষ্কে ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ দেরি হলে রোগীর অবস্থা দ্রুত অবনতি ঘটে। গবেষণায় দেখা গেছে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিউমার অপসারণ করা গেলে এবং প্রয়োজনে রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি দেওয়া হলে রোগী দীর্ঘদিন ভালো থাকতে পারেন। পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি, স্পিচ থেরাপি ও অকুপেশনাল থেরাপির প্রয়োজন হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্যানসার আক্রান্ত কোষ ও তার আশপাশের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো অপসারণ করা হয়, বিশেষ করে টিউমার যদি সীমিত এলাকায় থাকে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে। রেডিওথেরাপিতে নিয়ন্ত্রিতভাবে তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রয়োগ করে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করা হয়। কেমোথেরাপিতে অ্যান্টি-ক্যানসার বা সাইটোটক্সিক ওষুধের মাধ্যমে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করা হয়। কিছু ওষুধ ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আকারে খাওয়া যায়, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলো স্যালাইনের সঙ্গে রক্তে দেওয়া হয়, যাতে রক্তের মাধ্যমে ওষুধ শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে পারে।
লেখক : অধ্যাপক ও রেডিয়েশন ও মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট
এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সাভার, ঢাকা
চেম্বার : আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা
আরও পড়ুন:
চোখের রক্তবর্ণ ধারণের কারণ ও প্রতিকার
হটলাইন: ০১৭৪৫৩৪৯৪১০, ০১৭৩২৪২৯৩৯০