ইউএনওর স্বাক্ষর জাল করে মেয়েকে চাকরি দিলেন মাউশি কর্মকর্তা

খন্দকার রাকিবুল ইসলাম, রংপুর
১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২০
শেয়ার :
ইউএনওর স্বাক্ষর জাল করে মেয়েকে চাকরি দিলেন মাউশি কর্মকর্তা

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) স্বাক্ষর জাল করে মেয়েকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বেতন-ভাতা উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) রংপুর অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মো. আমির আলীর বিরুদ্ধে। ইউএনওর স্বাক্ষর জাল ও অবৈধ নিয়োগের বিষয়ে মাউশিকে কয়েক দফা প্রতিবেদন পেশ ও জানানোর পরও অক্টোবর মাস থেকে নিয়োগ পাওয়া ১৩ জনের বেতন-ভাতা চালু করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামীম মিঞা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৪ আগস্ট লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা মডেল কলেজে ল্যাব সহকারী (রসায়ন) পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৮ আগস্ট একজনকে নিয়োগও দেওয়া হয়। সেই পরীক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতিনিধি হিসেবে যার সই রয়েছে, তা জাল। ইউএনওর সইও জাল। এ ছাড়া ইনডেক্সের বিনিময়ে মাউশি কর্মকর্তার মেয়ে, ভাতিজা ও শ্যালিকাকে নিয়োগের অভিযোগও রয়েছে। এসব কিছুই হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) রংপুর অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মো. আমির আলীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়।

দেখা যায়, গত বছরের ৪ আগস্ট কলেজে ল্যাব সহকারী (রসায়ন) পদে পরীক্ষায় অংশ নেন সুজিত কুমার, মো. হাফিজুল ইসলাম ও আয়েশা সিদ্দিকা। সর্বোচ্চ নম্বরে আয়েশা সিদ্দিকা নির্বাচিত হন। ফলের কাগজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাছেন আলী, বিষয় বিশেষজ্ঞ লালমনিরহাট মজিদা খাতুন, সরকারি মহিলা কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক বিমল চন্দ্র বর্মণ, মাউশির ডিজি প্রতিনিধি লালমনিরহাট মজিদা খাতুন সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক নজরুল ইসলাম, কলেজের দাতা সদস্য তছলিম উদ্দিন ও কলেজ সভাপতি ইউনুছ আলীর সই রয়েছে। এর চার দিন পর আয়েশা সিদ্দিকার নিয়োগ চূড়ান্ত হয়। ইনডেক্স তালিকায় মাউশি কর্মকর্তার মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকার নামের পাশে ইউনুছ আলীর মোবাইল নম্বর ব্যবহার ও ইনডেক্স আবেদনে ইউএনওর সই জাল করা।

কলেজের প্রভাষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ২০২৪ সালের জুনে অবসর নিয়েছি। ২০১৬ সালের পর হাতীবান্ধায় যাইনি। ৪ আগস্ট তো যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমার সই জাল করেছে।’ দাতা সদস্য তছলিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাকে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সই নিয়েছে। কোথায় নিয়েছে, বলতে পারব না।’ নিয়োগ পাওয়া আয়েশা সিদ্দিকা মাউশি রংপুর অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক আমির আলীর মেয়ে। কলেজের বিজ্ঞান ল্যাবে সহকারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া শাহিন আলম পরিচালক আমির আলীর ভাতিজা। সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে নিয়োগ পাওয়া সাজেদা পারভীন মাউশি ঢাকা অফিসের কর্মকর্তা বসির উদ্দীনের শ্যালিকা। এ বিষয়ে সাবেক প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ইউনুছ আলী বলেন, মাউশি পরিচালক প্রস্তাব দিয়েছিলেনÑ তাঁর মেয়ে ও ভাতিজাকে নিলে টাকা ছাড়া কলেজের ইনডেক্স করে দেবেন।

কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাছেন আলী হাতীবান্ধা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির। জামায়াতের জেলা নায়েবে আমির হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কলেজ নিয়ে ইউএনওর স্বাক্ষর জাল করে বিতর্কিত হওয়ায় হাছেন আলীকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে পরিচালক প্রফেসর মো. আমির আলীর অফিসে গেলে জানা যায়, অফিসের জন্য সরকার নির্ধারিত সময়ের ২ ঘণ্টা আগেই বাসায় চলে গেছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, হাতীবান্ধা মডেল কলেজের বিষয়ে লক্ষ অভিযোগ, ফাইল আমি শুনানিতে দিয়েছি। নিজের মেয়ে, ভাতিজা ও ঢাকা অফিসের কর্মকর্তার শ্যালিকাকে ইনডেক্সের বিনিময়ে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করতেই মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন এই কর্মকর্তা।

এসব বিষয়ে হাতীবান্ধা মডেল কলেজ সভাপতি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম মিঞা বলেন, আমার সই স্ক্যান করে ১৩ জনের ইনডেক্স করেছেÑ এটা জালিয়াতি। এই কলেজের অধিকাংশ নিয়োগ হয়েছে অর্থের বিনিময়ে। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সভাপতি ইউনুছ আলী বিভিন্ন সময়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে এক পদে একাধিক লোককে নিয়োগ দিয়েছে। ইনডেক্স দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই কলেজে মাউশি কর্মকর্তা নিজের মেয়েকে নিয়োগ দিয়েছে বলে জেনেছি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বেসরকারি কলেজ শাখার সহকারী পরিচালক মো. মাঈন উদ্দিন জানান, হাতীবান্ধা মডেল কলেজে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ১১ জনের ইনডেক্স পাঠানোর অভিযোগ পেয়েছি।