শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন হত্যায় ‎৫ আসামি রিমান্ডে

আদালত প্রতিবেদক
১২ নভেম্বর ২০২৫, ২০:১৪
শেয়ার :
শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন হত্যায় ‎৫ আসামি রিমান্ডে

‎পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফটকে দিনের বেলা গুলি করে শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুন হত্যায় অংশ নেওয়া দুই শুটারসহ পাঁচজনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

‎বুধবার (১২ নভেম্বর) ঢাকার মেট্টোপলিটন মাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন।

‎‎রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন শুটার ফারুক হোসেন ফয়সাল ও রবিন আহম্মেদ ওরফে পিয়াস এবং রুবেল, শামীম আহম্মেদ, ইউসুফ ওরফে জীবন। তাদের মধ্যে ফারুক ও রবিন মামুন হত্যায় অংশ নেয় বলে তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ড শুনানিকালে আদালতকে জানিয়েছেন।

‎এর আগে মঙ্গলবার রাতে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর রায়েরবাজার থেকে ইউসুফকে গ্রেপ্তার হন।

‎‎এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালি জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. সাজ্জাদ হোসেন আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

‎‎আবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং জব্দ কররা অস্ত্র-গুলির বিষয়ে আসামিদের জানা ছিল মর্মে জানা যায়। আসামিরা সংঘবদ্ধ সসস্ত্র অপরাধী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা পরস্পর সহযোগিতায় দীর্ঘ দিন যাবৎ টাকার বিনিময়ে জব্দ করা অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে ঢাকা মহানগরসহ আশপাশ এলাকায় অনুরূপ হত্যাকাণ্ড, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্ম করে আসছিল। আসামিদের পুলিশ রিমান্ডে এনে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাদের করা আরও অপরাধের তথ্য উদ্‌ঘাটন, আরও অস্ত্রের সন্ধান, উদ্ধার ও সহযোগী অজ্ঞাত আসামিদের নাম-ঠিকানা জানা ও তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাদের ১০ দিনের রিমান্ডের প্রয়োজন।

‎রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর জামাল উদ্দিন মার্জিন রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ‘ফারুক ও রবিন কোর্ট অঙ্গনের পাশে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের সামনে দিনে-দুপুরে মামুনকে গুলি করে পালিয়ে যায়। তারা তাকে প্রকাশ্যে হত্যা করে। সন্ত্রাসীদের কোনো ছাড় নেই। আমরা সবাই দুপুরে ব্যস্ত থাকি। তখন তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’

‎‎এ আইনজীবী বলেন, ‘যেহেতু তারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসীদের বিষয়ে রাষ্ট্র কঠোর অবস্থানে। দেশে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। তারা আরও কী করে না করে। তাদের সর্বোচ্চ রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’

‎‎আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট নিয়াজ মোর্শেদ রোমান রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন শুনানিতে বলেন, ‘খুনের বিষয়ে থানায় অভিযোগ বা পদক্ষেপ নেয়নি পরিবার। আবার ঢাকা থেকে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় গেল আবার এল। এতেও দুই দিন সময় লাগে। আর অস্ত্র উদ্ধার হয়ে গেছে। এ ঘটনায় অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে এমন প্রমাণও হয়নি। অস্ত্র উদ্ধার হয়ে গেছে। রিমান্ডের প্রয়োজন নেই। রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থণা করছি।’

‎‎শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেয়।

‎‎মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ১০ নভেম্বর সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটের দিকে সূত্রাপুরের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে দুষ্কৃতিকারীরা দিনে-দুপুরে জনম্মুখে জনৈক তারিক সাইফ মামুনকে গুলি করে হত্যা করে, যা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচারিত হয়। এ ঘটনায় কোতয়ালী জোনাল টিমের এসআই কৃষ্ণ কুমার দাস ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ছায়া তদন্ত শুরু করেন। ছায়া তদন্তকালে আসামিরা এ হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার স্বপক্ষে তথ্য পেয়ে বিশেষ অভিযানে তাদের আটক করে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকারে করে।

তারা এ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলির বিষয়ে তথ্য প্রদান করলে তাদের প্রদত্ত তথ্য অনুসারে কৃষ্ণ কুমার আসামি ইউসুফের মোহাম্মদপুরের রায়ের বাজারস্থ রশিদ ম্যানশনের পেছনের একটি বাড়ি থেকে ওয়ারড্রবের নিচ থেকে সে দুটি পিস্তলও গুলি বের করে দেয়। জব্দ করা অস্ত্রের মধ্যে ফারুক এবং রবিন হত্যার ঘটনায় তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র শনাক্ত করে। আসামিরা স্বীকার করে, সোমবার সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটের দিকে সূত্রাপুর থানার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের রাস্তায় তারিক সাইফ মামুনকে হত্যার উদ্দেশ্যে রবিন ও ফারুক একাধিকবার গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। তারা আরো স্বীকার করে, দুই লাখ টাকা তাদের জনৈক বড় ভাই রনির কাছ থেকে পেয়ে এ হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে এক লাখ ৫৩ হাজার ৬৪০ টাকা এবং হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহত একটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ।

‎‎এ ঘটনায় কোতয়ালি জোনাল টিমের এসআই কৃষ্ণ কুমার দাস মোহাম্মদপুর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করেনে।

আমাদের সময়/জেএইচ