পরকিয়ার অন্তরঙ্গ মুহূর্ত দেখে ফেলায় গলাটিপে হত্যা
গাজীপুরের চাঞ্চল্যকর ৪ বছরের শিশু আনাছ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাত পৌনে ৯টার দিকে শ্রীপুর থানার ওসি ঢাকা রেঞ্জের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আনাছ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের বিষয় নিশ্চিত করেন।
এর আগে গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) গাজীপুরের শ্রীপুর থানার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের চিনাশুকানিয়া গ্রামের মধ্যপাড়ায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
জানা গেছে, পরকিয়ায় আসক্ত মোমেন ও হাসিনার শারিরীক সম্পর্কের অন্তরঙ্গ মুহূর্ত দেখে ফেলায় মোমেন আনাছের গলা টিপে ধরেন। হাসিনা ডান চোখে কাঁচির সূচালো অংশ ঢুকিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে মোমেন মরদেহ পাশের একটি ডোবায় ফেলে আসেন। হাসিনা কাঁচি ধুয়ে রান্নাঘরের চালে লুকিয়ে রাখেন।
এ ঘটনায় নিহতের দাদা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় মঙ্গলবার হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর দুই দিন পর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ওই গ্রাম থেকে সন্দেহভাজন শাহিনূর বেগম উরফে হাসিনাকে (৩০) আটক করে। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে হাসিনা আনাছ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।
এরপর সোমবার (১০নভেম্বর) বিকেলে হাসিনার দেখানো মতে ওই গ্রামের বাঙ্গালা বিলের মোস্তাফিজুরের খাদ (মাছ ধরার ডোবা) থেকে ভিকটিমের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত হাসিনা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জানা গেছে, নিহত আনাছ (৪) উপজেলার ওই গ্রামের সৌদী প্রবাসী মো. আল আমীনের ছেলে। আনাছের ঘাতকরা হলেন একই গ্রামের মো. নজরুল মোল্লার স্ত্রী শাহিনূর বেগম উরফে হাসিনা (৩০) ও আ. মোতালেবের ছেলে মোমেন (৪০)।
এদিকে হাসিনা গ্রেপ্তার হলেও মোমেন পলাতক রয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মহম্মদ আব্দুল বারিক জানান, পলাতক মেমেনকে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে। দ্রুত সময়ে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সকাল ৮টার দিকে সাইকেল নিয়ে আনাছ প্রতিবেশি নজরুলের ছেলে সমবয়সী আব্দুল্লাহর সঙ্গে খেলতে যায়। কিছু সময় পর দাদী উম্মে কুলসুম তাকে খুঁজতে যান। এসময় নজরুলের স্ত্রী হাসিনা জানান, আনাছ এসেছিল। সাইকেল রেখে কোথায় যেন চলে গেছে। এরপর থেকে স্বজনরা শত চেষ্টা করেও তার সন্ধান করতে পারেননি। একপর্যায়ে আনাছের দাদা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় সাধারন ডায়রি রুজু করেন।
পরবর্তীতে গাজীপুরের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী যাবের সাদেকের নির্দেশনায় জেলা গোযেন্দা পুরিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের চৌকুশ দল তদন্ত শুরু করে। সন্দেহজনকভাবে রোববার (৯নভেম্বর) রাতে প্রতিবেশি হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তার দেখানো মতে পরদিন সোমবার (১০নভেম্বর) বিকেলে ওই গ্রামের মোস্তাফিজুরের খাদ থেকে ভিকটিমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এরপর মঙ্গলবার আদালতে হাসিনাকে সোপর্দ করলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। রাতে পুলিশ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে হত্যার রহস্য উন্মোচন করে। এতে উল্লেখ করা হয়, আনাছের বাবা থাকেন সৌদী আরবে। বাড়ির কাজকর্ম করত হাসিনা ও তার স্বামী নজরুল। হাসিনার সঙ্গে পাশের বাড়ির মোমেনের পরকিয়ার সম্পর্ক ছিল। ঘটনার দিন সকাল ৮টার দিকে হাসিনার স্বামী নজরুল ইসলাম কাজে চলে যান। এ সুযোগে হাসিনার ঘরে ঢুকে পরকিয়া প্রেমিক মোমেন। দু’জনে জড়ান শারিরীক সম্পর্কে। সাইকেল নিয়ে হাসিনার ছেলে আব্দুল্লা (৫)’র সঙ্গে খেলতে আসে আনাছ। তাকে খুঁজতে ঘরে ঢুকে আনাছ মোমেন-হাসিনার অন্তরঙ্গ মুহূর্ত দেখে ফেলে। পরকিয়ার ঘটনা ধামাচাপা দিতে মোমেন দ্রুত অনাছের গলা টিপে ধরেন। কাঁচির সূচালো অংশ ডান চোখে ঢুকিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন হাসিনা। পরে মরদেহ খাদে ফেলে আসেন মোমেন। হাসিনা রক্ত মাখা কাঁচি ধুয়ে রান্নাঘরের চালে লুকিয়ে রাখেন।
এদিকে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
আমাদের সময়/আরআর