শ্বশুরবাড়িতে বাবা-মেয়ের গলাকাটা মরদেহ, স্ত্রী হাসপাতালে

হালুয়াঘাট প্রতিনিধি
১২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৪৬
শেয়ার :
শ্বশুরবাড়িতে বাবা-মেয়ের গলাকাটা মরদেহ, স্ত্রী হাসপাতালে

ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাটে ঘটেছে এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড। গভীর রাতে শ্বশুরবাড়িতে ঘরের ভেতর গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে বাবা রতন মিয়া (৩৫) ও তার ৮ বছরের শিশুকন্যা নুরিয়া আক্তারকে।

বুধবার (১২ নভেম্বর) গভীর রাতে হালুয়াঘাট উপজেলার ভুবনকোড়া ইউনিয়নের আমিরকাকুড়া গ্রামে নিহত রতন মিয়ার শ্বশুরবাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।

একই ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় স্ত্রী জুলেখা খাতুনকে (২৮) উদ্ধার করা হয়। তিনি বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর আগে নালিতাবাড়ী উপজেলার খিলাখুশি বাঘবেড় গ্রামের রতন মিয়ার সঙ্গে আমিরকাকুড়ার জুলেখা খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে রতন স্ত্রীর বাড়িতেই বসবাস করতেন। এক বছর ধরে জুলেখা সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি দেশে ছুটিতে আসেন এবং আবারও বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু রতন এতে আপত্তি জানান। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় এবং কলহ ক্রমে বাড়তে থাকে।

স্থানীয়রা জানান, বুধবার গভীর রাতে হঠাৎ ঘর থেকে চিৎকার শুনে তারা ছুটে যান। গিয়ে দেখেন রতন মিয়া ও তার শিশুকন্যা নুরিয়ার গলাকাটা মরদেহ মেঝেতে পড়ে আছে। পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছিলেন জুলেখা খাতুন। তাৎক্ষণিকভাবে স্ত্রী জুলেখাকে উদ্ধার করে প্রথমে হালুয়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থা দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

এলাকাবাসী জানান, হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে রতনের শ্বশুরবাড়িতেই। ফলে এটি পারিবারিক কলহ নাকি অন্য কোনো পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, সে নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

এ বিষয়ে হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুল ইসলাম হারুন বলেন, ‘বাবা-মেয়ের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পারিবারিক দ্বন্দ্ব থেকেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কিনা তা আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি।’

তিনি জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই, সিআইডি ও গোয়েন্দা পুলিশের টিম কাজ করছে। হত্যার রহস্য উদঘাটনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। চলমান তদন্ত শেষে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হবে।

নিহত রতনের পরিবারের লোকজন জানান, রতন খুব শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিল। ওদের মধ্যে বিদেশে যাওয়া নিয়ে মাঝে মাঝে ঝগড়া হতো ঠিকই, কিন্তু এমন ভয়াবহ পরিণতি হবে কেউ ভাবেনি। আমাদের চোখের সামনে ছোট্ট নুরিয়ার মরদেহ! এই দৃশ্য ভুলতে পারব না।

এদিকে গ্রামজুড়ে এখন গভীর শোক আর আতঙ্ক বিরাজ করছে। শান্ত ও নিস্তব্ধ গ্রাম আমিরকাকুড়ায় এখন কেবল রক্তের দাগ, কান্নার শব্দ আর অজস্র প্রশ্ন- কে বা কারা এমন নিষ্ঠুরভাবে বাবা ও কন্যাকে হত্যা করল?

আমাদের সময়/আরআর