‘জামায়াত মুনাফেকি কাজ করে, তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে’
বেহেশতের টিকিট আল্লাহ ছাড়া কেউ দিতে পারে না। জামায়াত ধর্মের অপব্যাখ্যা দিচ্ছে। সুতরাং যারা এসব মুনাফেকি কাজ করে তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়গাঁও ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘একটা দল আজ খুব জোরেশোরে বাংলাদেশে প্রচার করছে তারাই একমাত্র দেশপ্রেমিক দল। তারাই সৎ ও সঠিক দল। আমাদের মা-বোনদের কাছে গিয়ে বলছেন, বেহেশতের টিকিটও নাকি তারা দিচ্ছে!’
তিনি আরও বলেন, ‘বেহেশতের টিকিটতো আল্লাহ নবী ছাড়া কেউ দিতে পারবে না। আমি যদি ঠিক মত ইসলাম ধর্ম পালন করি তাহলে বেহেশতে যাওয়ার চিন্তা করতে পারি। দেওয়া না দেওয়ার ইচ্ছা তো আল্লাহর। তাইনা? এগুলো যারা করছে, এই দুনিয়াতে তারা কিন্তু ইসলামের অপব্যাখ্যা দিচ্ছে, আমার ধর্মের অপব্যাখ্যা দিচ্ছে।’
তিনি যোগ করেন, ‘আমরা এসবে বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি আমার কর্মেই হবে আমার বেহেশত। আমার কাজের মধ্যে দিয়ে বেহেশতে যাব অথবা যাব না। আমি যদি মানুষকে ভালোবাসি, আমি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরি, আমি যদি রোজা রাখি, মিথ্যা কথা না বলি, সুদ না খাই, তাহলে আমার বেহেশতে যাওয়ার একটা পথ তৈরি হবে।
কিন্তু ওই জামায়াতে ইসলামের টিকিট কাটলে বেহেশতে যেতে পারবে, না হলে পারবে না, এটা কি আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারে? এ কারণে আমি বলছি, যারা এরকম মুনাফেকি কাজ করে তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আজকে একটা নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগটা হচ্ছে আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরি করব। অর্থাৎ আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। জনগণ ভোটের মাধ্যমে একটা পার্লামেন্ট গঠন করবে, একটা সরকার গঠন করবে এবং তারা দেশ চালাবে। আজকে একটা সুযোগ আসছে সঠিক মানুষটাকে ভোট দিয়ে, সঠিক দলটাকে ভোট দিয়ে পার্লামেন্টে পাঠাবে। যারা আমাদের কাজ করবে, জনগণের কাজ করবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্যে করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এই সরকারকে খুব পরিস্কার করে বলতে চাই, দীর্ঘ ৯ মাস আপনি যে সংস্কারের নাম করে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথাবার্তা বললেন এবং অনেকগুলো বিষয়ে একমত হলেন, আপনি একমতের বাহিরে গায়ের জোড়ে দেশের ওপর কোনোকিছু যদি চাপিয়ে দিতে চান, তাহলে সব দায়-দায়িত্ব আপনাদের। দেশের মানুষ তা গ্রহণ করবে না।’
এদিন পিআর নিয়ে তিনি বলেন, ‘পিআর বোঝেন নাকি আপনারা? বোঝেন না। ঠিক আপনাদের মত আমরাও পিআর বুঝি না। পিআর হচ্ছে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব। কিছু বুঝলেন? আমরা এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। এটা আমরা চিনিনা। আমার দীর্ঘকাল ভোট দিয়ে আসছি। আমার এমপি প্রার্থী দাঁড়াবে তার মার্কা দেখে ভোটটা দেবো। তাইনা? কেউ নৌকা, কেউ ধানের শীষ, কেউ দাঁড়িপাল্লা- যাকে খুশি তাকে ভোট দেব। তাইনা? এরা এখন বলছে, আমরা দলকে ভোট দেব এবং সেই দল ঠিক করবে কে এমপি হবে আর কে হবে না। এই পদ্ধতি কি আপনারা চান?’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জামায়াত বলছে পিআর করতে হবে, তা না হলে ভোট হবে না। ভাই, ভোটকে এত ভয় পাচ্ছো কেন? কারণ, তোমরা জানো ভোট হলে তোমাদের অস্তিত্ব থাকবে না। এ কারণ জামায়াত ভোটকে এত ভয় পায়।’
এনসিপিকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সন্তানেরা ভালো কাজ করছে। ৫ আগস্টে আমাদের আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদেরকে মুক্ত করেছে। আমাদের সাহায্য করেছে। এখন এরাও একটা রাজনৈতিক দল করেছে এনসিপি। নাম শুনেছেন তো? কিন্তু কোথাও এনসিপি খুঁজে পাইনা। আছে এনসিপি একটাও? এই এলাকায় একটাও এনসিপি আছে? একটাও এনসিপি নাই। তাহলে ভোটটা কেমন করে হবে? ভোটটা হবে কিভাবে? ওরা কোনো ভোটই পাবে না।’
তিনি বলেন, ওইজন্য এনসিপিও জামায়াতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলছে- পিআর দিতে হবে, সনদ আগে দিতে হবে। এগুলো হচ্ছে শুধুমাত্র মানুষকে বিভ্রান্ত করা। ভোট পেছানো এবং আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া। আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, যেগুলোতে আমরা একমত হয়েছি বিএনপি শুধুমাত্র সেগুলোতেই একমত থাকবে। অন্য কোনো কিছুর দায় বিএনপি নেবে না। এই দায় সরকারকেই নিতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভারতে বসে হরতাল ঘোষণা করছে দেখলাম। গতকাল ঢাকাতে কিছু গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। এখন যারা এসব কাজ করে তাদের এদেশের মানুষ মেনে নেবে? কখনই মেনে নেবে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটাই আমার জীবনের শেষ নির্বাচন। তাই শেষ বয়সে আপনাদের কাছে বিনিত আবেদন- এবার আপনারা আমাকে ধানের শীষে ভোট দিয়ে আপনাদের কাজ করার সুযোগ করে দিবেন।’
এসময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি অ ফয়সল আমিন, সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সদর থানা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিন, পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ, বড়গাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ডা. আহম্মদ আলীসহ জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও বক্তব্য প্রদান করেন।
আমাদের সময়/আরআর