ফিলিস্তিনিদের ইচ্ছেমতো হত্যা করেছে ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৪২
শেয়ার :
ফিলিস্তিনিদের ইচ্ছেমতো হত্যা করেছে ইসরায়েল


গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা গোটা বিশ্ব দেখেছে। কীভাবে নারী ও শিশুদের প্রতিদিন হত্যা করা হয়েছে। এবার সেই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের কথা স্বীকার করেছেন খোদ ইসরায়েলি সেনারাই। তারা জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ চলাকালে সব ধরনের সামরিক নিয়মকানুন ভেঙে পড়েছিল। আইনি বিষয়গুলো ধুলোয় মিশে গিয়েছিল। বেসামরিক লোকদের হত্যা করা হতো নিছক অফিসারদের ব্যক্তিগত খেয়ালখুশি মতো। ব্রিটিশ টিভি চ্যানেল আইটিভির প্রমাণ্যচিত্র ‘ব্রেকিং র‌্যাংকস : ইনসাইডার ইসরায়েলস ওয়ার’ ইসরায়েলি সেনা ও কর্মকর্তাদের বর্ণনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) ট্যাঙ্ক ইউনিটের কমান্ডার ড্যানিয়েল বলেন, আপনি যদি কোনো বাধা ছাড়াই গুলি করতে চান, তা হলে সেটি আপনি করতে পারেন। ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশ না করে সেই তথ্যচিত্রে অংশ নিয়েছেন। তারা সবাই সরকারি সেনাদের আচরণবিধি অবক্ষয়ের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। এ ছাড়া আইডিএফ মানবঢাল হিসেবে ফিলিস্তিনিদের নিয়মিত ব্যবহার করত, সেটিও তাদের কথায় উঠে এসেছে।

আইডিএফের সরকারি নির্দেশিকায় বলা হয়েছেÑ একজন সৈনিক কেবল তখনই গুলি চালাবে যদি লক্ষ্যবস্তুর কাছে হাতিয়ার থাকে এবং তাকে ক্ষতি করার ক্ষমতা থাকে। কিন্তু ক্যাপ্টেন ইয়োটাম ভিল্ক বলেন, গাজায় এসবের কিছুই ছিল না। শুধু হাঁটার সময় সন্দেহ হলেও তাকে গুলি করা হতো। এলি নামে পরিচিত এক সেনা বলেছেন, জীবন ও মৃত্যু বা গুলি চালানো নিয়ম দ্বারা নির্ধারিত হয় না। এটি স্থলভাবে কমান্ডারের বিবেকই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এই সৈনিক আরও জানান, এই পদ্ধতিতে কেউ দ্রুত হেঁটে গেলেও সন্দেহভাজন, আবার খুব ধীরে হাঁটলেও সন্দেহভাজন।

এলি একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেনÑ যেখানে একজন ব্যক্তি ছাদে কাপড় শুকাতে দিয়েছেন। কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি টার্গেটে পড়েছেন। কিন্তু তিনি দোষী নন। এখানে এমন নয় যে তার কাছে দূরবিন বা অস্ত্র ছিল। তিনি শুধু কাপড়ই শুকাতে দিয়েছিলেন। কিন্তু ট্যাঙ্ক থেকে একটি গোলা ছোড়া হয়। ভবনটি অর্ধেক ভেঙে পড়ে। এর ফলে অনেক হতাহত হয়।

আইডিএফের গোয়েন্দা তথ্যে দেখা গেছে, ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তাদের হিসাব অনুসারে, গাজায় নিহতদের ৮৩% বেসামরিক নাগরিক ছিলেন, যা আধুনিক সংঘাতের জন্য একটি ঐতিহাসিক সর্বোচ্চ। এই যুদ্ধে ৬৯,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং এক মাস আগে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও হতাহত বন্ধ হচ্ছে না।

ওই তথ্যচিত্রে কিছু সেনা বলেছেন, তারা ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ এবং ধর্মীয় নেতাদের ভাষণ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন, যারা বলেছিলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর প্রতিটি ফিলিস্তিনিই ছিল তাদের বৈধ টার্গেট।

জাতিসংঘের একটি কমিশন সেপ্টেম্বরে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে, ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জোগ ৭ অক্টোবরের হামলার পরপরই বলেছিলেন : এ জন্য একটি সম্পূর্ণ জাতি দায়ী।’ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় জাতিগত নিধন চালিয়েছে।