সিন্ডিকেটের কব্জায় পেঁয়াজ, দাম বাড়ছে লাফিয়ে
নতুন পেঁয়াজ বাজারে ওঠার আগেই পুরনো মজুদ ফুরিয়ে গেছে এমন অজুহাতে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে পেঁয়াজ সিন্ডিকেট। কৃষকের কাছ থেকে কম দামে কেনা পেঁয়াজ কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজার মনিটরিংয়ের দুর্বলতার সুযোগে অসাধুচক্র অল্প সময়ে অতিরিক্ত মুনাফা তুলছে বলে অভিযোগ ভোক্তা ও সংশ্লিষ্টদের।
রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল বেশির ভাগ দোকানে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাইকারিতে দাম ছিল ৯৫ থেকে ১০৫ টাকার মধ্যে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে। গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ৭০ থেকে ৮০ টাকা থেকে দাম বেড়ে ১০০ টাকা হয়। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে যা আরও বেড়ে ১২০ টাকায় পৌঁছায়। খুচরা বিক্রেতারাই বলছেন, এভাবে দাম বাড়াটা অস্বাভাবিক।
কদমতলীর খুচরা বিক্রেতা মো. ইসমাইল ও মিলন বলেন, এই সময়ে সাধারণত পেঁয়াজের দাম একটু বাড়ে। তবে এবার যে হারে দাম তোলা হয়েছে তা অতিরিক্ত।
রাজধানীর বৃহত্তম পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, মৌসুম শেষে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে এসেছে। ভারতের রপ্তানি বন্ধ থাকায় আমদানিও থেমে আছে। এসব কারণে দাম চড়া। আড়তদার কানাই সাহা ও খোকন সাহা বলেন, মজুদ শেষ হওয়ায় স্থানীয় হাটগুলোতেই দাম বেড়েছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে তুলতে এখনও সময় লাগবে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেপ্টেম্বর এলেই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিতে সক্রিয় হয়ে উঠে অসাধু চক্রগুলো। কিন্তু এবার শুরুতে দাম বাড়তি থাকলেও ৮০ টাকার আশপাশে ছিল। কিন্তু শেষ সময়ে এসে অতীতের মতো আবারও সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অল্প সময়ে বেশি লাভ তুলে নিতে পাইকারিতে ৩৫ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আবার কমিশন বাণিজ্যও চলছে। সরবরাহকারীরা ফোনে দাম বলে দেন, সে দামেই বিক্রি করে কমিশন পান ব্যবসায়ীরা। কিছু আমদানিকারক বর্তমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে আমদানির অনুমতি আদায়েরও চেষ্টা করছেন।
বাজার পরিস্থিতি নিয়ে শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল মাজেদ বলেন, তিন মাস ধরে বাজারে সংকট চলছে। পেঁয়াজের মজুদ এখন তলানিতে। দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত আমদানির বিকল্প নেই।
তবে বাংলাদেশ কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন (ক্যাব) বলছে, বাড়তি দামের পেছনে যৌক্তিক কারণ খুব কম। সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন জানান, এবার উৎপাদন ভালো হয়েছে, মজুদও ছিল ভালো। নতুন পেঁয়াজও শিগগিরই বাজারে উঠবে। এর মধ্যেই সিন্ডিকেট অতিরিক্ত মুনাফার কারসাজি করছে। যে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে তার পুরোটা সিন্ডিকেটের পকেটে যাচ্ছে। কৃষকের লাভ হচ্ছে না।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
নাজের হোসাইন জানান, ভারতে পেঁয়াজের দাম কমেছে এবং রপ্তানি শুল্কও নামিয়েছে। ফলে দেশের কিছু বিক্রেতা ইচ্ছাকৃতভাবে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে আমদানির অনুমতি আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছে। এতে নতুন পেঁয়াজ তোলা কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তিনি আরও বলেন, তদারকির এই বড় ঘাটতির সুযোগ নিয়ে পেঁয়াজে আবারও সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অতীতেও এমনটা হয়েছে। এখনও হচ্ছে। আর ঘুরেফিরে সাধারণ ভোক্তাদেরকেই এর মাশুল গুনতে হচ্ছে।
পেঁয়াজের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারাও। কদমতলীর তুষারধারা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের খরচের চাপ বেড়েছে, কষ্টও বেড়েছে। একটি দরকারি পণ্যের দাম একলাফে ৪০ টাকা বেড়ে যায়, অথচ কেউ দেখার নেই। বাজার মনিটরিং থাকলে এমনটা হতে পারে না।
এদিকে বাজার স্থিতিশীল করতে সীমিত পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। সংস্থাটি গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্যসচিব ও কৃষিসচিবকে চিঠি পাঠিয়েছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, কয়েক দিনের মধ্যে দাম না কমলে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে। তার ভাষায়, দেশের বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে, আরও দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন পেঁয়াজও উঠবে। তারপরও চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে দাম না কমলে আমদানি খুলে দেওয়া হবে। সরকারের কাছে বর্তমানে ২৮ শতাধিক আমদানির আবেদন রয়েছে। এর দশ শতাংশ অনুমোদন দিলে বাজারে সরবরাহ বেড়ে দাম অনেকটাই নেমে যাবে। তবে দাম খুব কমে গিয়ে কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন তা সরকার নজরদারি করছে।