চার্চ ও স্কুলে ককটেল হামলার পেছনে কারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১৫
শেয়ার :
চার্চ ও স্কুলে ককটেল হামলার পেছনে কারা

হঠাৎ রাজধানীর খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের চার্চ ও স্কুল কেন ককটেল হামলাকারীদের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে? এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ। এক মাসের ব্যবধানে রাজধানীর দুটি চার্চ লক্ষ্য করে ককটেল হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সেন্ট যোসেফ হাইয়ার সেকেন্ডারি স্কুলের ভেতরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল টিম গত অক্টোবর মাসে ৮টি বোম কল রেসপন্স করে ২৭টি ককটেল নিরাপদে নিষ্ক্রিয় করে।

শুক্রবার রাতেই রাজধানীর কাকরাইলে সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রাল চার্চের ফটকে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। ঠিক এক মাস আগে গত ৮ অক্টোবর তেজগাঁওয়ের হলি রোজারি চার্চে দুটি ককটেল ছোড়া হয়। এই দুই চার্চ এবং মোহাম্মদপুরের স্কুলে কে বা কারা কেন এ হামলা করেছে, তা এখনও পুলিশ ও গোয়েন্দারা বের করতে পারেননি। শনাক্ত করতে পারেননি হামলাকারীদের। তবে পুলিশের তদন্তকারীদের সন্দেহÑ আতঙ্ক সৃষ্টির জন্যই চার্চ ও স্কুলে ককটেল হামলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশের প্রথম সন্দেহের তালিকায় রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের পলাতক নেতাকর্মীরা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, প্রতিটি ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। হামলাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে পুলিশের নানামুখী তদন্ত চলছে।

গত শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে কাকরাইলের সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রাল চার্চ লক্ষ্য করে দুটি ককটেল ছোড়া হয়। প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, মোটরসাইকেলে আসা দুজন ব্যক্তি চার্চে ককটেল ছুড়ে পালিয়ে যায়। গতকাল পর্যন্ত তাদের শনাক্ত করা যায়নি। সেখানে থাকা সিসি ক্যামেরায় তাদের ফুটেজ ধরা পড়েনি। তবে অন্য জায়গার ফুটেজ দেখে পুলিশ ধারণা করছে, মোটরসাইকেলে আসা দুই হামলাকারীই ককটেল ছুড়ে মেরেছে। দুটি ককটেলের মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হয়। এতে কেউ হতাহত হয়নি। আরেকটি ককটেল বোম্ব ডিসপোজাল টিম এসে উদ্ধার করে। সেই ককটেলটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। পরে পুরো চার্চ ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করে নিরাপদ ঘোষণা করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান। ঘটনার ব্যাপারে রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।

জানা গেছে, শুক্রবার ককটেল হামলার পরের দিনই সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রাল চার্চে যিশুখ্রিস্টের জন্মের ২০২৫তম জয়ন্তী উপলক্ষে একটি বড় অনুষ্ঠান ছিল। শুক্রবার রাতে চার্চের ভেতর ওই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছিল। ককটেল হামলার ঘটনায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এর আগে গত ৮ অক্টোবর তেজগাঁওয়ের হলি রোজারি চার্চে দুটি ককটেল ছোড়া হয়। হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে পালিয়ে যেতেও দেখেন স্থানীয়রা। তখনও একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয় এবং অন্যটি অবিস্ফোরিত অবস্থায় ছিল। পরে বোম্ব ডিসপোজাল টিমের সদস্যরা অবিস্ফোরিত ককটেলটি উদ্ধারের পর নিষ্ক্রিয় করে। হলি রোজারি চার্চে হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তেজগাঁও থানাপুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার তিনজনই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

গত শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মোহাম্মদপুরের সেন্ট যোসেফ হাইয়ার সেকেন্ডারি স্কুলের ভেতরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ মোহাম্মদপুর থানায় জিডি করেছে।

জিডিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে, শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বিদ্যুৎ ছিল না। ঠিক সেই সময় ৩ নম্বর ফটকের বাইরে থেকে একটি ককটেল ভেতরে ছুড়ে মারা হয়। এতে বিস্ফোরণ হয়। তবে কেউ হতাহত হয়নি। কে বা কারা ককটেল ছুড়েছে, সেটি তারা দেখেনি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

মোহাম্মদপুর থানার ওসি কাজী রফিক আহমেদ জানান, কে বা কারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে এখনও শনাক্ত করা যায়নি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।