ঢাকায় ভোটার হচ্ছেন আসিফ, নানা আলোচনা
কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) থেকে ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগান ও হাজারীবাগ থানা) সংসদীয় আসনের ভোটার হওয়ার আবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গতকাল রাজধানীর গ্রিন রোডে ধানমন্ডি থানা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে তিনি এ আবেদন করেন।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এই উপদেষ্টা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ভোটার স্থানান্তরের আবেদন নিয়ে রাজনীতিতে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। এর মূলে রয়েছে ঢাকা-১০ আসন থেকে বিএনপি এখনও কাউকে মনোনয়ন দেয়নি।
বিকাল পৌনে ৪টার দিকে ধানমন্ডি থানা নির্বাচন কার্যালয়ে পৌঁছান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তার আগে কিছু তরুণ ওই কার্যালয় ভবনের নিচে অবস্থান করছিলেন। আসিফ মাহমুদ গাড়ি থেকে নামতেই তাঁরা ‘ঢাকা ১০-এর মাটি, আসিফ ভাইয়ের ঘাঁটি’ বলে সেøাগান দিতে থাকেন। আসিফ মাহমুদ আবেদন জমা দিয়ে বের হওয়ার পরও একই সেøাগান দিতে দেখা যায় ওই তরুণদের। আসিফ মাহমুদ যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখনও ওই তরুণরা তাঁর সঙ্গেই ছিলেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘যেহেতু ঢাকা থেকে নির্বাচন করব, এটা মোটামুটি নিশ্চিত, সেই জায়গা থেকে নিজের ভোটটাও ঢাকায় নিয়ে আসা। কারণ ভোটটা যাতে অপচয় না হয়। আমি যদিও ভোটার হয়েছি আগে, কিন্তু কোনো নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। আমি ভোটার হওয়ার পর দুটি নির্বাচন হয়েছে ২০১৮ ও ২০২৪ সালে। সে সময় কেউই ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচনে যাতে ভোট দিতে পারি, সেটা নিশ্চিত করলাম। নির্বাচন কোথা থেকে করব, এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ঢাকা থেকে করব, ইনশা আল্লাহ।’
কোনো দলে যোগ দেবেন কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা স্বতন্ত্র নির্বাচন করার। তারপর দেখা যাক।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
বিএনপি যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি, সেগুলোর মধ্যে ঢাকা-১০ আসন রয়েছে। বিষয়টি উল্লেখ করে একজন সাংবাদিক আসিফ মাহমুদের কাছে জানতে চান, এটি তাঁর জন্যই ফাঁকা রাখা হয়েছে কিনা বা তাঁর সঙ্গে বিএনপির কোনো আলোচনা চলছে কিনা। জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমার কারও সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি। কোনো রাজনৈতিক দল কোনো আসন ফাঁকা রাখল কি রাখল না, সেটা আমার জানার বিষয় নয়। আমার সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগতভাবে, এককভাবেই নেব।’
এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, সরকার থেকে পদত্যাগ করার পর ধানমন্ডি এলাকায় থাকার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। সেই জায়গা থেকে এই এলাকার ভোটার হচ্ছেন, যাতে ভোটটা অপচয় না হয়।
সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে জনতার কাতারে আসবেন কবে, এমন এক প্রশ্নে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই বলছি যে আমি নির্বাচন করব। কবে নাগাদ পদত্যাগ করব, এটা সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আলোচনা করে দ্রুতই আপনাদের সে বিষয়ে জানাব।’
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট কবে হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমতের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকরা উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনা করার জন্য সময় দিয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ফিডব্যাক পাওয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে বলা যাবে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
আরেক প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এই সরকারের তিনটি কাজ ছিল; সংস্কার, বিচার ও গণতান্ত্রিক রূপান্তর। আপনারা দেখছেন, তিনটি কাজই সমানভাবে এগিয়ে চলেছে। বিচারের বিষয়ে এ মাসের মধ্যেই একটা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে বলে আমরা জানি। সংস্কারের কার্যক্রমও প্রায় শেষের দিকে। এখন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে এ বিষয়গুলো ডিফাইন হয়ে গেলেই আর কোনো সন্দেহ থাকবে না। সরকার খুব স্পষ্টভাবে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করার কথা বলেছে এবং বারবার বলছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকার সব অংশীজনকে প্রস্তুত করছে এবং সবার সহযোগিতাও চাইছে।’
যেসব দল আঙুল বাঁকা করে ঘি খেতে চায়, তাদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান কিনাÑ সাংবাদিকদের এ কথায় আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এখন আমি রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। যেহেতু সরকারের অংশ আছি, এ বিষয়ে পরে কথা বলব।’
প্রমীলা ক্রিকেট দলে যৌন হয়রানি প্রসঙ্গ : বাংলাদেশ প্রমীলা ক্রিকেট দলে যৌন হয়রানি নিয়ে সম্প্রতি যে অভিযোগ সামনে এসেছে, সে বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিসিবির সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। বিসিবি একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘ক্রীড়াক্ষেত্রসহ সব ক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা এবং তাঁদের যোগ্য সম্মানটা যেন আমরা নিশ্চিত করতে পারি, সেই জায়গা থেকে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্রমাণিত হলে আমরা অবশ্যই যথাযোগ্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব। ইতোমধ্যে আমার দপ্তর থেকেও ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। যদি তিনি আইনি পদক্ষেপ নিতে চান, সরকার সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।’
সরকার এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করবে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টা বিসিবির অভ্যন্তরীণ, প্রাথমিকভাবে বিসিবির তদন্তের ওপর আমরা ভরসা করতে চাই। পরবর্তী সময়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব এ বিষয়ে।’