বিয়ানীবাজারে একটি সেতুর জন্য ৫৪ বছরের অপেক্ষা
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ঘাঘুয়া ও ফুলমলিকÑ দুটি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের জীবন আজও স্থায়ী একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগের নিত্যসঙ্গী। দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে খালের ওপর একটি সেতুর আশায় দিন গুনছে এই দুই গ্রামের মানুষ। প্রতিশ্রুতি মিলেছে বহুবার, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি কোনোটি।
গ্রাম দুটির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালটি যোগাযোগের একমাত্র প্রতিবন্ধকতা। শুকনো মৌসুমে স্থানীয়দের তৈরি বাঁশের সাঁকোই ভরসা। বর্ষাকালে খালের স্রোতে সেই সাঁকো ভেঙে গেলে গ্রাম দুটি কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, অসুস্থ রোগী কিংবা কৃষকÑসবাইকে পাড়ি দিতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
ফুলমলিক গ্রামের জালাল উদ্দিন বলেন, কিছুদিন আগে গ্রামের এক যুবকের মরদেহ বাড়িতে আনার সময় সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় স্বজনদের মরদেহ কাঁধে করে নিতে হয়েছিল। এমন কষ্টের কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
বিদ্যালয়ছাত্রী মারিয়া জান্নাত ইকরা জানায়, প্রতিদিন সাঁকো পেরিয়ে স্কুলে যাওয়া তার জন্য এক রোমাঞ্চ নয়, এক দুঃস্বপ্ন। ভয়ে ভয়ে পার হই, তবু সময়মতো পৌঁছানো যায় না, বলল সে।
গ্রামের প্রবীণ সিকন্দর আলী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেও কষ্ট হয়। বৃষ্টি হলে একদমই যাওয়া যায় না।
স্থানীয় কৃষক জয়নাল উদ্দিনের আক্ষেপ, সেতু না থাকায় রোগীকে কাঁধে করে হাসপাতালে নিতে হয়, কৃষিপণ্যও বাজারে পৌঁছায় না সময়মতো।
২০১৯ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ ও ২০২৪ সালের বন্যায় সেটি ভেঙে গেলে আবারও পুরোনো দুর্ভোগে ফিরে যায় তারা। বর্তমানে একই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে পারাপার করছেন স্থানীয়রা। উপজেলা প্রকৌশলী দীপক কুমার দাস জানান, ২০২২ সালে অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল, তবে অনুমোদন মেলেনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম মুস্তফা মুন্না বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি পেলে এই গুরুত্বপূর্ণ সেতুটিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমরা কাজ করছি।
আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহবাবুর রহমান খান শিশু জানান, ঘাঘুয়া-ফুলমলিক খালের ওপর একটি স্থায়ী সেতু এখন সময়ের দাবি। উন্নয়ন পরিকল্পনায় এই সেতুটি অন্তর্ভুক্ত হলে স্থানীয়দের জীবনযাত্রা যেমন সহজ হবে, তেমনি কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।