ডিডস আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু

ছোট অপারেটরের লাইসেন্স ফি কমানোর উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৪০
শেয়ার :
ডিডস আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু

দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও আঞ্চলিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো (আইএসপি) বাজার থেকে সরিয়ে দেওয়ার একটি সংগঠিত প্রচেষ্টা চিহ্নিত করেছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এই প্রেক্ষাপটে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে-ডিডস (উউড়ঝ) আক্রমণের মাধ্যমে ছোট আইএসপিদের বিপর্যস্ত করার পেছনে জড়িত চক্রের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যেই অভিযান শুরু করেছে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ফেসবুকে এক বিবৃতিতে জানান, আমরা লক্ষ্য করেছি, কিছু বড় আইএসপি বা গোষ্ঠী নিয়মিত ছোট অপারেটরদের নেটওয়ার্কে ডিডস আক্রমণ চালাচ্ছে। এসব আক্রমণের লোড অনেক ক্ষেত্রে ৫০০ থেকে ৭০০ গিগাবিট পর্যন্ত হয়- যা জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের নেটওয়ার্কের পক্ষে প্রতিরোধ করা প্রায় অসম্ভব। ফলে ক্ষুদ্র আইএসপিরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে, গ্রাহক হারাচ্ছে আর বড় কোম্পানিগুলো অন্যায্যভাবে বাজার দখল করছে। তিনি বলেন, নতুন ‘টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কিং ও লাইসেন্সিং নীতিমালা ২০২৫’-এ ছোট আইএসপিদের কার্যক্ষেত্র সীমিত না করে বরং সম্প্রসারণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে তারা নিজেদের নির্ধারিত এলাকায় সীমাবদ্ধ না থেকে পুরো জেলায় সেবা দিতে পারবে।

ছোট আইএসপিদের স্বার্থে নতুন নীতি : মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন নীতিমালায় ক্ষুদ্র আইএসপিদের লাইসেন্স ফি যৌক্তিক পর্যায়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল পর্যায়ের আইএসপি লাইসেন্স ফি কিছুটা বাড়িয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের লাইসেন্সকে আংশিকভাবে কম্পেন্সেট করার পরিকল্পনা চলছে। এর ফলে ছোট আইএসপিদের লাইসেন্স ফি বাড়বে না, বরং কিছু ক্ষেত্রে কমেও যেতে পারে।

ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, আমরা আইএসপিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প হিসেবে বিবেচনা করি। তাই তাদের টিকে থাকা ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

সরকারি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, কিছু জাতীয় পর্যায়ের কোম্পানি ছোট আইএসপিদের ভয় দেখিয়ে বা নীতিমালার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ‘একোয়ার’ করার চেষ্টা করছে। মন্ত্রণালয় এটিকে স্পষ্টভাবে অপরাধমূলক কার্যক্রম হিসেবে বিবেচনা করছে।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ডিডস আক্রমণের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স নবায়ন, নাম পরিবর্তন বা শেয়ার হস্তান্তর সংক্রান্ত আবেদন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।

মূল্যনীতি ও রেভিনিউ শেয়ারিংয়ে ভারসাম্য : সম্প্রতি বিটিআরসি প্রস্তাবিত এফটিএসপি মূল্যনীতি ও নেটওয়ার্ক লাইসেন্সিং নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা চললেও মন্ত্রণালয় বলছে, তারা এখনই আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করছে না। তবে নির্দেশিকা আনুষ্ঠানিকভাবে পাওয়ার পর অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।

ফয়েজ তৈয়্যব জানান, নতুন মূল্যনীতিতে এমন ভারসাম্য আনার চেষ্টা চলছে, যাতে ইন্টারনেটের মূল্যস্ফীতির হার বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত সীমা অতিক্রম না করে। একই সঙ্গে আইএসপিদের এসওএফ (ঝড়পরধষ ঙনষরমধঃরড়হ ঋঁহফ)-এর আওতায় আনার প্রস্তাবও বিবেচনায় রয়েছে, যাতে তারা এই ফান্ড থেকে সুবিধা ভোগ করতে পারে।

মন্ত্রণালয় আশ্বস্ত করেছে, বাজার থেকে ছোট আইএসপি সরিয়ে দেওয়ার যেকোনো অপচেষ্টা ব্যর্থ করা হবে। ডিডস আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায্য প্রতিযোগিতামূলক ইন্টারনেট ইকোসিস্টেম নিশ্চিত করা হবে। বিবৃতির ফয়েজ তৈয়্যব আরও বলেন, বাংলাদেশে ইন্টারনেট কোনো বিলাসিতা নয়Ñ এটি নাগরিক অধিকার, যা সাইবার সুরক্ষা আইন ২০২৫-এ স্বীকৃত। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা টিকে থাকলেই দেশের ডিজিটাল অর্থনীতি টেকসইভাবে এগিয়ে যাবে।