নারীর অনিয়মিত পিরিয়ড কারণ, নির্ণয় ও প্রতিকার
প্রতিমাসে নারীদের জরায়ু থেকে রক্তক্ষরণ হয়। একে বলা হয়ে থাকে পিরিয়ড বা মাসিক। সাধারণত প্রতি ২৮ দিন অন্তর পিরিয়ড হয়ে থাকে। তবে ২১ দিন পর থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে পিরিয়ড হলে সেটিকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। পিরিয়ড সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং এ সময় হালকা তলপেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। কিন্তু কখনও কখনও এই স্বাভাবিক চক্রে পরিবর্তন ঘটে। ফলে পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে যায়। যখন দুই পিরিয়ডের ব্যবধান ৩৫ দিনের বেশি বা ২১ দিনের কম হয়, তখন তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড বলা হয়। পিরিয়ড শুরু হওয়ার প্রথম এক থেকে দুই বছর কিংবা মেনোপজের আগের এক থেকে দুই বছর এমন অনিয়ম স্বাভাবিক হতে পারে। তবে এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কখনও কখনও দুই পিরিয়ডের মাঝখানে বা স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের পর রক্ত যেতে পারে, যা পিরিয়ড নয়; এ ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
অনিয়মিত পিরিয়ডের পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। অতিরিক্ত ওজন, পিসিওডি বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ, থাইরয়েডজনিত সমস্যা, ওভারিয়ান বা অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিতে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের টিউমার ইত্যাদি সাধারণ কারণ হিসেবে দেখা যায়। কিছু ওষুধ, যেমন-প্রজেস্টেরন ট্যাবলেট, ফেনোথায়াজিন, সিমিটিডিন ও মিথাইলডোপা অনিয়মিতভাবে সেবন করলেও পিরিয়ডের স্বাভাবিক চক্রে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, কঠোর ব্যায়াম বা অতিরিক্ত পরিশ্রমও অনিয়মের জন্য দায়ী। এছাড়া সার্ভাইক্যাল বা এন্ডোমেট্রিয়াল পলিপ, এমনকি ক্যানসারজনিত কারণেও দুই পিরিয়ডের মাঝখানে রক্তপাত হতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন (ডিএমপিএ) বা ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহারের ফলেও অনেক সময় মাসিকের তারতম্য দেখা যায়।
অনিয়মিত পিরিয়ড নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসক সাধারণত রোগীর ইতিহাস শোনেন, শারীরিক পরীক্ষা করেন এবং প্রয়োজনে কিছু পরীক্ষা দেন। এর মধ্যে ওজন পরিমাপ, রক্তে হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা, থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি উল্লেখযোগ্য। চিকিৎসা মূলত কারণভিত্তিক হয়-অর্থাৎ যে কারণে অনিয়ম ঘটছে তা নির্ণয় করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়।
বর্তমানে আমাদের দেশে মেয়েদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির কারণে পিসিওএস বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম বেড়ে চলেছে, যা অনিয়মিত পিরিয়ডের অন্যতম প্রধান কারণ। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। বাইরের খাবার, ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার, ফ্রাইড চিকেন বা ফ্রাইড রাইস পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে বা প্রয়োজনে বর্জন করতে হবে। নিয়মিত আউটডোর গেমস বা ব্যায়াম করা উচিত। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে পিরিয়ডের স্বাভাবিক চক্র বজায় রাখা সম্ভব। প্রয়োজনে পুষ্টিবিদ বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক : প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ, বন্ধ্যত্ব ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
আরও পড়ুন:
চোখের রক্তবর্ণ ধারণের কারণ ও প্রতিকার
চেম্বার : আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর–৬
হটলাইন : ১০৬৭২, ০৯৬১০১০০৯৯৯
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন