কেন আবারও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করল উত্তর কোরিয়া?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:২৬
শেয়ার :
কেন আবারও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করল উত্তর কোরিয়া?

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথের দক্ষিণ কোরিয়া সফরে বার্ষিক নিরাপত্তা আলোচনার কয়েকদিন পর উত্তর কোরিয়া তাদের পূর্বাঞ্চলীয় জলসীমার দিকে কমপক্ষে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ শুক্রবার (৭ নভেম্বর) নিশ্চিত করে বলেছেন, স্বল্প-পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রটি পূর্ব সাগরের (জাপান সাগর) দিকে ৭০০ কিলোমিটার (৪৩৫ মাইল) পথ পাড়ি দিয়ে উড়ে গেছে।

জাপান সরকারও জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে এবং এটি জাপানের একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে জলে পতিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়া তাদের পশ্চিমাঞ্চলীয় জলসীমায় ১০ রাউন্ড কামান নিক্ষেপ করেছে বলে দাবি করার চার দিন পর এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিউলকে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরির অনুমতি দেওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পর পিয়ংইয়ংয়ের এই সর্বশেষ উৎক্ষেপণ ঘটল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপের ফলে দক্ষিণ কোরিয়া পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন ব্যবহারকারী দেশগুলোর একটি ছোট ক্লাবে যোগ দেবে, যা তাদের নৌ ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতির একজন কর্মকর্তা শুক্রবার বলেছেন, পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য তারা আমেরিকার কাছ থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করতে চায়, যা দেশে তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে।

চলতি বছরের শুরুতে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্প এবং তার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিপক্ষ লি জে মিয়ং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে পুনরায় সংলাপ শুরু করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কিন্তু ২০১৯ সালে আমেরিকার সঙ্গে পূর্ববর্তী আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর থেকে কিম ওয়াশিংটন এবং সিউলের সঙ্গে আলোচনা এড়িয়ে চলছেন।

এর আগে সেপ্টেম্বরে উত্তর কোরিয়ার নেতা বলেছিলেন, পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করলে তিনি আলোচনার জন্য উন্মুক্ত। তিনি বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, তার দেশ একটি “অপরিবর্তনীয়” পারমাণবিক রাষ্ট্র।

গত মাসে কিম রাশিয়া ও চীনসহ মিত্র দেশগুলোর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পিয়ংইয়ংয়ে একটি বড় সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছিলেন। এতে তার দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্রগুলো প্রদর্শিত হয়, যার মধ্যে একটি নতুন আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ছিল।

উত্তর কোরিয়ার সরকারি কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) শুক্রবার জানিয়েছে, সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনার জন্য উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার সামরিক কর্মকর্তারা এই সপ্তাহে পিয়ংইয়ংয়ে বৈঠক করেছেন।

কোরিয়ান পিপলস আর্মির জেনারেল পলিটিক্যাল ব্যুরোর ভাইস ডিরেক্টর পাক ইয়ং ইল বুধবার (৫ নভেম্বর) উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভিক্টর গোরেমিকিনের নেতৃত্বাধীন একটি রাশিয়ান প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

কেসিএনএ জানিয়েছে, কিম এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে সম্মত “গভীর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের” অংশ হিসেবে মিত্ররা সম্পর্ক সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এই সপ্তাহের শুরুতে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, তারা উত্তর কোরিয়ায় সম্ভাব্য নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সনাক্ত করেছে, যা রাশিয়ায় আরও সৈন্য মোতায়েনের সম্ভাব্য ইঙ্গিত দিতে পারে।

এখন পর্যন্ত সিউলের অনুমান, পিয়ংইয়ং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তা করতে ১৫,০০০ সৈন্য পাঠিয়েছে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক সৈন্য নিহত হয়েছে।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় গোয়েন্দা পরিষেবা আরও জানিয়েছে, তারা বিশ্বাস করে কিম সেপ্টেম্বর থেকে অবকাঠামো পুনরুদ্ধার প্রকল্পে সহায়তার জন্য মিত্র দেশে প্রায় ৫,০০০ সামরিক নির্মাণ সেনা পাঠিয়েছেন।

আমাদের সময়/আরডি