হঠাৎ পেঁয়াজে বাড়তি ঝাঁজ, কমেছে চাল-ডিমের দাম
দেশের পেঁয়াজের বাজারে হঠাৎ শুরু হয়েছে অস্থিরতা। মাত্র পাঁচ-ছয় দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। তবে ডিম, মুরগি, চালসহ সবজির দাম এখন নিম্নমুখী।
রাজধানীর বাজারগুলোতে শুক্রবার (৭ নভেম্বর) ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। গত সপ্তাহে যারা ৮০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনেছেন, তারা এখন কিনছেন ১২০ টাকা দরে।
আমদানিকারকদের দাবি, সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। গত মাসে মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগানো হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন আগে ভারী বৃষ্টিপাতে সেসব পেঁয়াজ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। সরকার আমদানির অনুমতি দিলে দুই দিনের মাথায় দাম অর্ধেকে নেমে যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আছে। এ মুহূর্তে আমদানির অনুমতি দিলে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, এটি দামের কোনো স্বাভাবিক ওঠানামা নয় বরং একটি সিন্ডিকেট পরিকল্পিতভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়েছে; যাতে সরকার আমদানির অনুমতি দিতে বাধ্য হয়।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ। তবে এক বছর আগের তুলনায় দাম এখনো ২২ শতাংশ কম। শুক্রবার রাজধানীর মালিবাগ, কারওয়ান বাজার ও আগারগাঁওয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। পাঁচ-ছয় দিন আগে এই দাম ছিল ৮০ টাকার আশপাশে। সেই হিসাবে কেজিতে বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
কদমতলী এলাকার খুচরা বিক্রেতা মো. মিলন হোসেন বলেন, ‘যদিও দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ তলানিতে, তারপরও দাম একলাফে এতটা বাড়ার কথা নয়। কিন্তু নতুন পেঁয়াজ না উঠায় মজুদকারীরা দাম অতিরিক্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে পেঁয়াজের বিক্রি কমে গেছে।’
এদিকে, বাজারে আমন ধানের নতুন চাল আসি আসি করছে। এতে চালের দামে কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। আগের চেয়ে চালের দাম এখন কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা কম। চালের বাজারে স্বস্তির আভাস দিয়েছেন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারাও।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জিরা, পাইজাম, গুটি স্বর্ণাসহ কয়েক ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ১ থেকে ২ টাকা কমেছে। দাম এর আগের সপ্তাহেও ১ টাকা করে কমেছিল। সে হিসাবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
এদিকে, বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, সাদা ১২০। এছাড়া হাঁসের ডিম ২১০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ১১০ টাকা ও সোনালি কক মুরগির ডিমের হালি ৭০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরবরাহ বাড়ায় সব ধরনের সবজির বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, মুলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ফুলকপি ছোট আকারের ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও লাউ ৩০ থেকে ৫০ টাকা পিস দরে বিক্রি হচ্ছে।
গ্রীষ্মকালীন সবজি ঝিঙা ৫০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, কচুর লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা ও ধুন্দল ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে কাঁচামরিচ কেজিতে ৪০ টাকা কমে প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে ২০ থেকে ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, দেশি শসা ৫০ থেকে ৭০ টাকা ও হাইব্রিড শসা ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর মগবাজার কাঁচা বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী লিমন। তিনি বলেন, ‘বিগত কয়েক মাস ধরে সবজির দাম অনেক বেশি ছিল। সে তুলনায় আজ কিছুটা কম দামের সবজি কেনা গেল।’
তালতলা বাজারের বিক্রেতা মনির বলেন, ‘সবজি গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে। এ সপ্তাহেও কিছু কিছু সবজির দাম কমের দিকে। পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম বাড়েনি।’
আমাদের সময়/এআই