প্রার্থীদের নিরাপত্তা ঝুঁকির তথ্য সংগ্রহে গোয়েন্দারা

শাহজাহান আকন্দ শুভ
০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২১:০৭
শেয়ার :
প্রার্থীদের নিরাপত্তা ঝুঁকির তথ্য সংগ্রহে গোয়েন্দারা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীদের কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে কিনা, তা যাচাইয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। পুলিশের পক্ষে এ কাজটি শুরু করেছে স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)। ঝুঁকি বিশ্লেষণের পর সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের বিশেষ নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে। তথ্যাদি পর্যালোচনার পর কোনো এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তাও নেওয়া হবে। বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের গণসংযোগকে কেন্দ্র করে যেন কোনো ধরনের সহিংসতা না হয়, এ জন্য মাঠ পুলিশকে আগাম সজাগ থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আসনভিত্তিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরির কাজও ইতোমধ্যেই শুরু করেছে পুলিশ। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এবং চট্টগ্রাম-৮ আসনে দলটির মনোনীত প্রার্থী মো. এরশাদ উল্লাহ গত বুধবার বিকালে গণসংযোগকালে সন্ত্রাসীদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হন। এ কাণ্ডের পর সংসদ সদস্য প্রার্থীদের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচনায় এসেছে। বিভিন্ন দল মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যেসব ব্যক্তি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তাদের নিরাপত্তায় কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়Ñ এ বিষয়ে শিগগিরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিকনির্দেশনা দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগেই একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ সদর দপ্তর এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বিএনপি, জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল তাদের প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রার্থীরা নিজ নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগও শুরু করেছেন।

জানতে চাইলে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) বাহারুল আলম বুধবার আমাদের সময়কে বলেন, প্রার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রার্থীদেরও নিজেদের নিরাপত্তায় সজাগ থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকালে শান্তিপূর্ণ ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পুলিশ সদর দপ্তরের তরফে শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি; চলছে প্রায় দেড় লাখ পুলিশের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ। এর পাশাপাশি ভোটের দিন এবং এর আগে-পরে সার্বিক নিরাপত্তার কৌশল নির্ধারণেও কাজ শুরু হয়েছে। নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের তালিকাও হালনাগাদ করা

হবে। এর পাশাপাশি প্রার্থীদের নির্বাচনী গণসংযোগকালে কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কাজও শুরু হয়েছে। বিশেষ করে পুলিশের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও এসব বিষয় বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে সারাদেশে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রত্যেকের বিষয়ে ১১টি সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেছে এসবি, নিরাপত্তা কৌশলের অংশ হিসেবে। প্রাপ্ত তথ্যাদি ইতোমধ্যেই পুলিশ সদর দপ্তর এবং এসবির সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সব দলের প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর ফের তাদের বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করবে এসবি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আসনভিত্তিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। প্রতিটি আসনের ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র, সহিংসতাপ্রবণ এলাকা, প্রার্থীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি, কোন এলাকায় কতটুকু নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন, কোন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা উচিত, কোন কোন এলাকায় টহল বাড়ানো দরকার, কোথায় কোথায় বডি ওর্ন ক্যামেরাসহ পুলিশ মোতায়েন করতে হবেÑ আসনভিত্তিক নিরাপত্তা পরিকল্পনায় এর কৌশল নির্ধারণ করা হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এ পরিকল্পনা হালনাগাদ করা হবে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন দল তাদের প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করার পর প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঘরোয়া বৈঠকের পাশাপাশি পথসভা ও নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেছেন। বুধবার চট্টগ্রামে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ সন্ত্রাসীদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর গতকাল মাঠ পুলিশকে প্রার্থীদের গণসংযোগ কর্মসূচির নিরাপত্তার দিকে নজর রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে। যে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তাৎক্ষণিকভাবে যেন পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক আমাদের সময়কে বলেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী গণসংযোগকালে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং প্রার্থী ও ভোটারদের নিরাপত্তা বিষয়ে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয়, এ কাণ্ড অনেক আসনের প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। এ ছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরাজিত শক্তির অপতৎপরতা রোধেও সজাগ থাকতে হবে।

এই অপরাধ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, অতীতে যেসব আসনে বেশি নির্বাচনী সহিংসতা হয়েছে কিংবা যেসব আসনে সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে, সেসব আসনে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে। একই সঙ্গে সন্দেহভাজনদের আইনের আওতায় আনাও জরুরি। অন্যথা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বা গণসংযোগে যে কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা এমনকি প্রাণহানির মতো ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।