বিএনপি প্রার্থী এরশাদের গণসংযোগে ব্রাশফায়ারে ‘সন্ত্রাসী’ বাবলা নিহত
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. এরশাদ উল্লাহ সন্ত্রাসীদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যার আগে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার হামজারবাগ ও ওয়াজেদিয়া এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ চালানোর সময় তিনিসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। তবে সন্ত্রাসীদের গুলিতে সেখানে সরওয়ার হোসেন বাবলা ঘটনাস্থলেই মারা যান।
নিহত সরওয়ার হোসেন বাবলা চট্টগ্রামের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার সঙ্গে চট্টগ্রামের আরেক সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের বিরোধ রয়েছে। ছোট সাজ্জাদ বর্তমানে কারাগারে আছেন। বাবলা আর ছোট সাজ্জাদ দুইজনই ছাত্রশিবিরের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনের সহযোগী। এরমধ্যে ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী তামান্না বর্তমানে কারাগারে আছেন।
সাজ্জাদের সহযোগী শিবির সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ ও সরওয়ার হোসেন বাবলা পরবর্তীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধে জড়ান। এরপর গত এক বছরে ছোট সাজ্জাদের সহযোগীদের হাতে বাবলার ৫ সহযোগী নিহত হন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করার পরে সারাদেশে নির্বাচনী উৎসব শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের আবহাওয়াকে অন্যদিকে সরিয়ে নিতে একটি মহল অস্ত্র নিয়ে মাঠে নেমেছে। আমি আশা করব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর হস্তে এসব নিয়ন্ত্রণ করবে এবং নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করবে।’
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মসজিদের সামনে ডানহাতে ঘড়ি ও সাদা পাঞ্জাবি, পায়জামা পরা বাবলা গুলিতে ঝাজরা হয়ে যান। তিনি যতক্ষণ না মারা যান, ততক্ষণ সন্ত্রাসীরা উপর্যুপরি গুলি করতে থাকেন। বাবলার মৃত্যু নিশ্চিত করেই তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) উপকমিশনার মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনী গণসংযোগ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়েছি। এরশাদ উল্লাহকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে আমাদের লোকজন কাজ করছেন।’
তবে নাম প্রকাশ না করে মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এক যুবক মারা গেছেন। কিন্তু চিকিৎসক ঘোষণা দেওয়ার আগে পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করতে পারছেন না।’
বাবলার ভাই আবদুল আজিজ আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমার ভাই ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। এখন এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মরদেহ নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করছে।
তিনি অভিযোগ করেন, শিবির ক্যাডার ছোট সাজ্জাদের সহযোগীরা বাবলাকে খুন করেছে।
এরশাদ উল্লাহ’র ঘনিষ্ট সহযোগী, বিএনপি নেতা শরীফ মোহাম্মদ কামাল আমাদের সময়কে বলেন, ‘পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের হামজারবাগ ও ওয়াজেদিয়া এলাকায় গণসংযোগ করছিলেন এরশাদ উল্লাহ। সেখানে হাজীপাড়া পূক মসজিদ (পূর্ব মসজিদ) নামের একটি মসজিদে তিনি মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে বের হয়ে হেঁটে যাবার সময় এরশাদ উল্লাহ ও তার সঙ্গে থাকা লোকজনের ওপর সন্ত্রাসী হামলা শুরু হয়।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মসজিদের সামনেই সন্ত্রাসীরা সরওয়ার হোসেন বাবলাকে গুলি করতে থাকেন। এ সময় কাছে থাকা এরশাদ উল্লাহ ছাড়াও আরও দুইজন গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার তাৎক্ষণিকতায় হতবিহবল লোকজন এদিক-ওদিক দৌড় দেন। সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে বাবলার লোকজন এসে মাটিতে লুটিয়ে থাকা অবস্থায় তাকে ধরে কান্না করতে থাকেন। আর বিএনপির লোকজন ও স্থানীয়রা এরশাদ উল্লাহসহ অন্যদের এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান।
খবর পেয়ে বিএনিপ ও সহযোগী সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী এভারকেয়ার হাসপাতালে ভিড় জমান।
ছাত্রশিবিরের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী, এইট মার্ডারের আসামি, বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ হোসেনের দুই শীষ্য ছোট সাজ্জাদ ও সরওয়ার হোসেন বাবলা। দুইজন প্রথমে একসঙ্গে চাঁদাবাজি ও খুন শুরু করেন। পরবর্তীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ শুরু হয়। এরপর ছোট সাজ্জাদ ও তার সহযোগীরা বাবলা এবং তার অনুসারীদের ওপর চড়াও হন। ছোট সাজ্জাদের সহযোগীদের হামলায় এ পর্যন্ত বাবলার পাঁচ সহযোগী খুন হয়েছেন। গত বছরের ৩০ আগস্ট নগরীর পাশ্চবর্তী এলাকা হাটহাজারীর কুয়াইশে মাসুদ কায়সার ও মো. আনিস নামে দুইজনকে খুন করে ছোট সাজ্জাদের অনুসারীরা। গত বছরের ২১ অক্টোবর নগরীর চান্দগাঁও শমসের পাড়া চায়ের দোকানে ঢুকে আফতাব উদ্দিন তাহসিন নামের এক যুবককে খুন করে ছোট সাজ্জাদরে সহযোগীরা।
এরপর গতক ঈদুল ফিতরের আগের দিন রাতে নগরীর বাকলিয়া সংযোগ সড়কে একটি কারকে ঘিরে ব্রাশফায়ার করলে ঘটনাস্থলে বখতেয়ার হোসেন মানিক ও মো. আবদুল্লাহ নামে দুইজন খুন হন।
পুলিশ সে সময় জানিয়েছিল, ওই কারে চালকের পাশের আসনে বসা ছিলেন স্বয়ং সরওয়ার হোসেন বাবলা। চালক আবদুল্লাহ মারা গেলেও হাতে গুলিবিদ্ধ বাবলা কৌশলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
আমাদের সময়/জেআই