ইসরায়েলে কারা-পীড়ন বেড়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২৫
শেয়ার :
ইসরায়েলে কারা-পীড়ন বেড়েছে

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের অতর্কিত আক্রমণের জের ধরে দুই বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় অবর্ণনীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েল। পাশাপাশি ইসরায়েলের কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর নির্যাতনও মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়েছে ইসরায়েল। যুদ্ধের সময় বন্দি নির্যাতন ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের এক ধরনের রুটিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ৩২ বছর বন্দিজীবন কাটানোর পর সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত প্রখ্যাত ফিলিস্তিনি লেখক নাসের আবু স্রুর তাঁর স্মৃতিকথায় ইসরায়েলের অকথ্য নির্যাতনের চিত্র তুলে এনেছেন। তার সেই স্মৃতিকথা ইতোমধ্যে ৭টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। চলতি মাসে বইটি একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ার তালিকার শীর্ষে রয়েছে। সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে ১৫০ জনের বেশি যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যদিও মুক্তির পরই তারা প্রিয় ভূমি ফিলিস্তিনে ফিরে যেতে পারেননি। বরং তাদের মিশরে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বেশির ভাগ বন্দিই রয়েছে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে।

৫৬ বছর বয়সী নাসের স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আক্রমণের পর বন্দিদের মারধর, খাবারের কষ্ট, এমনকি কারাগারে ঠাণ্ডার মধ্যে রাখা হয়েছে। কারারক্ষীদের পোশাক পরিবর্তন করে বুকে ‘যোদ্ধা’ লেখা হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে তারা যেন বন্দিদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে এবং শত্রুদের মারধর, ভয়াবহ নির্যাতন, এমনকি হত্যাও করেছে।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের একটি কমিশন ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ইসরায়েলের হেফাজতে ৭৫ জন নিহত ফিলিস্তিনির তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যদিও ইসরায়েলের কারা কর্তৃপক্ষ সব সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল।

তরুণ বয়সে প্রথম ইন্তিফাদায় (১৯৮৭-১৯৯৩) অংশ নিয়েছিলেন নাসের। সেই সময় ইসরায়েলের একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। নির্যাতনের মুখে স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে নাসেরকে ১৯৯৩ সালে প্যারোল ছাড়াই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় ধরে নির্জন কারাবাসের সময় তিনি স্নাতক ডিগ্রি এবং তার পর রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং কারাগার থেকে পাচার হওয়া কবিতা এবং অন্যান্য লেখা প্রকাশ করতে শুরু করেন। তাঁর কারাগারের স্মৃতিকথা, দ্য টেল অব আ ওয়াল : রিফ্লেকশনস অন হোপ অ্যান্ড ফ্রিডমÑ মূলত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে একজন আত্মীয়ের সঙ্গে ফোনে কথোপকথনের মধ্য দিয়ে বইটি লেখা হয়েছে। এটি আরবি থেকে সাতটি ভাষায় প্রকাশের জন্য অনুবাদ করা হয়েছে এবং প্যারিসের ইনস্টিটিউট অব দ্য আরব ওয়ার্ল্ড কর্তৃক প্রতিবছর প্রদত্ত আরব সাহিত্য পুরস্কারের জন্য চূড়ান্ত মনোনীত হয়েছে।

এদিকে মুক্তির বার্তা পাওয়ার পরও নাসের নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেননি। এর আগে তিনি অনেকবার আশায় বুক বেঁধেছিলেনÑ কিন্তু সেগুলো ছিল নিষ্ফল। কিন্তু এবার তাকে মুক্তির তালিকায় তার নাম যুক্ত করে হামাস। নাসের জানান, ৭ অক্টোবর হামলার পর ইসরায়েল বন্দিদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এমন স্থানে তারা নির্যাতন করত, যেখানে কোনো ক্যামেরা নেই।