বাণিজ্যিকভাবে মিঠা পান চাষ হচ্ছে নওগাঁয়

আসাদুর রহমান জয়, নওগাঁ
০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৮
শেয়ার :
বাণিজ্যিকভাবে মিঠা পান চাষ হচ্ছে নওগাঁয়

বাঙালির আতিথেয়তায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত পান। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবসহ, সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে পানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পানে রয়েছে নানান ভেষজ গুণ। এ ছাড়া পান অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিত। পানের প্রতিটি পাতা মানেই টাকা। আর এই মিঠা জাতের সুস্বাদু পানই এবার বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে নওগাঁয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পানের উৎপাদন ভালো হলেও দাম না পাওয়ায় হতাশ চাষিরা। তবে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পান রপ্তানি বন্ধ থাকায় কিছুটা বিপাকে পড়েন চাষিরা।

ধান চাষের জন্য বিখ্যাত নওগাঁয় ধান চাষের পাশাপাশি পান চাষেও আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। পরিশ্রম ও খরচ কম হওয়ায় বাড়ছে লাভের অংশ। একবার রোপণে দীর্ঘ সময় ফলন পাওয়ার সুবাদে বাড়ছে চাষের পরিধি। পান চাষের জন্য উঁচু, বেলে দোঁ-আশ মাটি ও ছায়াযুক্ত জায়গা উপযুক্ত। উৎপাদিত পান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।

রাজশাহী মোহনপুর উপজেলার ধুরইল গ্রামের পানচাষি সাদ্দাম হোসেন দুই বছর আগে নওগাঁ সদরে শালুকা গ্রামে ৫ বিঘা জমি ৬ বছরের জন্য বন্ধক নিয়ে পান চাষ করছেন। জমি বন্ধকসহ হাল-চাষ, চারা রোপণ, মাচা তৈরিসহ আনুষঙ্গিক খরচ পড়েছে ২৭ লাখ টাকা। রোপণের ৬ মাস পর থেকে পান উঠানো শুরু হয়। প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার টাকার পান বিক্রি হচ্ছে।

পানচাষি সাদ্দাম হোসেন বলেন, বর্তমানে পানের দাম কিছুটা কম রয়েছে। প্রতি বিড়া পান প্রকারভেদে ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে সার, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিক খরচ হচ্ছে। খরচের তুলনায় লাভের পরিমাণ খুবই কম। আগামী দেড় মাস পর দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তবে বছর শেষে খরচ বাদে বিঘাপ্রতি ২-৩ লাখ টাকা লাভের আশা করা হচ্ছে।

চাষিরা বলেছেন, এসব পান মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। তবে গত এক বছর থেকে রপ্তানি বন্ধ থাকায় কমেছে দাম। এক বছর আগেও ২০০ টাকা বিড়া বিক্রি হলেও বর্তমানে ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচই ঠিকমতো উঠছে না। আবারও যদি মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশে পান রপ্তানি শুরু হয়, চাষিরা দাম পাবেন।

পানচাষি বাদল হোসেন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পানের উৎপাদন বেশ ভালো হচ্ছে। তবে দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচ ওঠা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। গত এক বছর থেকে রপ্তানি বন্ধ থাকায় কমেছে দামও। আগে ২০০ টাকা বিড়া বিক্রি হলেও বর্তমানে ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবারও যদি রপ্তানি শুরু করা যায়, তাহলে পান চাষে আগ্রহ বাড়বে এবং ভালো দাম পেয়ে লাভবান হওয়া যাবে।

পান চাষি লিটন আহমেদ বলেন, পানে রোগবালাই কম হয়ে থাকে। অন্য ফসলের তুলনা পান চাষ লাভজনক। আমরা মিঠা জাতের পান চাষ করে থাকি। শক্তপানার পানের দাম বেশি হয়ে থাকে। এসব পান রাজশাহী ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।

পান শ্রমিক আকাশ আহমেদ বলেন, প্রতিদিন পানের বরজে পান উঠানো, মাচা মেরামত ও পানি সেচসহ বিভিন্ন কাজ করতে হয়। বরজে ৮-১০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। জনপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা আয় করছেন তাঁরা। এসব কাজ সবাই করতে পারে না। জেলার বাইরের বিশেষ করে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার শ্রমিকরা এ কাজে বেশি অভিজ্ঞ।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. খলিলুর রহমান বলেন, জেলায় ৪৩ হেক্টর জমিতে মিঠা ও সাচি জাতের পানের আবাদ হয়েছে, যা থেকে বছরে প্রায় ৫২৬ টন পান উৎপাদনের আশা। জেলা সদর, মান্দা, বদলগাছী ও সাপাহার উপজেলায় পানচাষ হয়ে থাকে।