উচ্ছেদের পর আশ্রয়হীন পাঁচ কোল পরিবার
খাসজমি খুঁজছে প্রশাসন, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগ
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ হওয়া নৃগোষ্ঠীর পাঁচটি কোল পরিবার এখনও আশ্রয়হীন। খাসজমিতে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে প্রশাসন, তবে উপযুক্ত জায়গা না পাওয়ায় পরিবারগুলো বাঁশঝাড়ের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে তাদের খাবার ও সামগ্রী ভিজে গেছে।
জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন, আশপাশে কোথাও খাসজমি থাকলে সেখানে টিনের ঘর তুলে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার জন্য। উপজেলা পরিষদ থেকে এ বিষয়ে অর্থায়ন করা হবে। তবে এখনও ঘর তোলার উপযোগী জায়গা পাওয়া যায়নি।
গোদাগাড়ীর মোহনপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘ইউএনও সাহেবের নির্দেশে গত বুধবার থেকে আশপাশে খাসজমি খুঁজছি, কিন্তু এখনও পাইনি। গত বৃহস্পতিবার পাঁচটি পরিবারকে ৬৫ কেজি চাল ও ৩ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।’
গত সোমবার থেকে বাঁশঝাড়ের নিচে আশ্রয় নেওয়া কোল পরিবারগুলো দুই দিনের বৃষ্টির কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে। বাঁশঝাড়ের নিচে রাখা চাল-ডাল ও আটা ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ কেউ গ্রামের অন্যের বাড়ির বারান্দা বা গোয়ালঘরে রাত কাটাচ্ছেন।
বাবুডাইং গ্রামে উচ্ছেদ হয়ে বাঁশঝাড়ে আশ্রয় নেওয়া রুমালী হাসদা (৪৫) গত শুক্রবার বলেন, রাতের বৃষ্টিতে চাল ও আটা ভিজে গেছে। পলিথিন দিয়ে ঢেকেও রক্ষা করা যায়নি। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে খুব দুর্ভোগে আছি আমরা।’
শুক্রবারও বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উচ্ছেদ হওয়া কোল পরিবারগুলোর খোঁজ নিতে এসে সহানুভূতি জানিয়েছেন।
উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি হিংগু মুরমু বলেন, ‘যে দলিলের ভিত্তিতে জমির মালিকানা দাবি করে উচ্ছেদের মামলা করা হয়েছে, সেই দলিল ঠিক নেই। আদিবাসী মালিককে হিন্দু সাজিয়ে জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ছাড়া দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
এর আগে আদালতের নির্দেশে গত সোমবার রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বাবুডাইং গ্রামে কোল জনগোষ্ঠীর পাঁচটি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়।
কোল জনগোষ্ঠীর রুমালী হাসদা জানান, তাঁদের পাঁচটি পরিবার খাসজমি মনে করে ২৫ বছর ধরে সেখানে বাস করছিল। এর মধ্যে ওই জমি নিজেদের দাবি করে নজরুল ইসলাম আলমগীর ও তাঁদের আত্মীয়স্বজন মিলে কয়েকজন আদালতে মামলা করেন। রুমালী হাসদার অভিযোগ, আদালতের একতরফা রায়ে তাঁদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। আমাদের কোনো নোটিশও দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘একটি জিনিসও বাইর করতে দিল না। জিনিস সরাইবার লাইগ্যা দুই ঘণ্টা সময় চাহিয়্যাছিনু, তা-ও দিলেন না।’
উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেওয়া রাজশাহী জেলা জজ আদালতের নাজির বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, গোদাগাড়ী সহকারী জজ আদালতে দায়ের করা মামলায় উচ্ছেদের আদেশ দেন বিচারক। মামলার বাদী আলমগীর কবির দিং ও বিবাদী সোনা দিং (সনাতন সরেন)। উচ্ছেদ অভিযানের সময় আইনজীবী নাসির উদ্দিন, গোদাগাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বজিৎ ঘোষ আরও বলেন, ‘বাড়িঘর ভাঙার আগে আমরা ভুক্তভোগীদের বলেছিলামÑ বাদীর সঙ্গে সমঝোতা করে সময় নিতে। কিন্তু বাদী রাজি না হওয়ায় আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে বাদীকে দখল বুঝিয়ে দিয়েছি।’
মামলার বাদী আলমগীর কবির বলেন, ‘আদালতের উচ্ছেদ আদেশ পেয়ে আমি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছি, তাঁরা নিজেরা যেন বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে সরে যান। কিন্তু তাঁরা সেটা মানেননি।’
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, ‘আমরা তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য জায়গা খুঁজছি। ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত গুচ্ছগ্রামে যদি কোনো বাড়ি ফাঁকা থাকে, সেখানে তাঁদের স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হবে।’