সাইকেল নিয়ে হিমালয়ের ৩ ট্রেইল জয়

সাইয়িদ মাহমুদ পারভেজ, কুমিল্লা
০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৫
শেয়ার :
সাইকেল নিয়ে হিমালয়ের ৩ ট্রেইল জয়

কুমিল্লার তরুণ পর্বতারোহী ও সাইক্লিস্ট আরিফুর রহমান উজ্জ্বল গড়েছেন এক অবিশ্বাস্য ইতিহাস। সাইকেল নিয়ে তিনি জয় করেছেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালা হিমালয়ের তিনটি ভয়ংকর ট্রেইল। নিজের সাহস, আত্মবিশ্বাস ও অধ্যবসায়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন এই অভিযাত্রী।

বরফ, পাথর, খাড়া ঢাল আর অক্সিজেন স্বল্পতায় ভরা হিমালয়ের দুর্গম পথ যেখানে হাঁটতেও ভয় পান অনেকে, সেখানে সাইকেল নিয়ে আরোহন করেছেন উজ্জ্বল। এর মাধ্যমে উজ্জ্বল করেছেন কুমিল্লা ও বাংলাদেশের মুখ, বিশ্বের ছাদে উড়িয়েছেন লাল-সবুজের পতাকা।

আরিফুর রহমান উজ্জ্বল নেপালের হিমালয়ের তিনটি বিখ্যাত সার্কিট ট্র্যাক-মানাসলু সার্কিট ট্র্যাক (লারকে পাস-১৭,৩৯০ ফুট), অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্র্যাক (থরংলা পাস-১৭,৭৬৯ ফুট ও তিলিচো লেক) এবং এভারেস্ট বেজক্যাম্প থ্রি পাস ট্র্যাক (প্রায় ১৮,৭০০ ফুট উচ্চতা), সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন সাইকেল নিয়ে।

দুই মাসেরও কম সময়ে সম্পন্ন এই অভিযানকে তিনি নাম দিয়েছেন ‘দুরন্ত হিমালয়ান এক্সপিডিশন’। এখন পর্যন্ত জানা যায়, হিমালয়ের বুকে এত দীর্ঘ ও বিপজ্জনক পথ সাইকেলে অতিক্রম করা বিশ্বের একমাত্র মানুষ আরিফুর রহমান উজ্জ্বল। অভিযাত্রা শেষ করে ১ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরেছেন।

নেপালের এক পাহাড়ি গ্রাম থেকে ফোনে উজ্জ্বল বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, তিন বছরের স্বপ্ন পূরণ হলো। পদে পদে মৃত্যুঝুঁকি ছিল। কিন্তু ইচ্ছাশক্তিই আমাকে জিতিয়েছে। এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছেÑ আমি সত্যিই পেরেছি!’

জীবন ঝুঁকির অভিযাত্রা : অভিযাত্রার পুরো সময় তাঁকে লড়তে হয়েছে বরফ, কাদা, ভূমিধস, অক্সিজেন স্বল্পতা, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ও ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে। একেকবার টানা ৩-৪ কিলোমিটার খাড়া পথ সাইকেল ঠেলে বা কাঁধে তুলে অতিক্রম করতে হয়েছে। মাঝরাতে ঘুম ছাড়াই সকালে আবার ট্র্যাকে উঠতে হয়েছে। কখনও তীব্র রোদে, কখনও বরফে, কখনও জ্বরে বা ক্র্যাম্পে আক্রান্ত হয়েও থামেননি তিনি।

তাঁর বন্ধু ফাহামিদা রহমান তৃষা বলেন, ‘উজ্জ্বলই ইতিহাসের প্রথম মানুষ, যিনি এক অভিযানে নেপালিয়ান হিমালয়ের তিনটি দুর্ধর্ষ ট্র্যাক সাইকেলে জয় করেছেন। এটা নিঃসন্দেহে হিমালয়ের সবচেয়ে দীর্ঘ ও চ্যালেঞ্জিং সাইক্লিং ট্রিপ।’

উজ্জ্বল বলেন, ‘এটা শুধু সাইক্লিং নয়, ছিল সাইক্লিং ও ট্রেকিংয়ের কম্বিনেশন। কখনও চালিয়েছি, কখনও কাঁধে তুলেছি, কখনও ঠেলে তুলেছিÑ এই তিন সার্কিট শেষ করতে সময় লেগেছে দুই মাসেরও কম।’

কুমিল্লার সন্তান, দেশের গর্ব : আরিফুর রহমান উজ্জ্বল কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার দক্ষিণ দুর্গাপুর ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের সন্তান। তাঁর বাবা ছাদেকুর রহমান কুমিল্লা মডার্ন স্কুলের সাবেক শিক্ষক, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। উজ্জ্বল কুমিল্লা জিলা স্কুল ও ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক। নিজের এই অর্জন তিনি উৎসর্গ করেছেন প্রয়াত বড় ভাই সাইফুল ভাই ও পিতা ছাদেকুর রহমানকে।

উজ্জ্বলের বন্ধু ও চিকিৎসক নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী বলেন, ‘আমার জানা মতে এটি বিশ্বরেকর্ড। দেশে ফেরার পর আমরা চেষ্টায় থাকব উজ্জ্বলকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে, যেন তাঁকে দেখে তরুণরা অনুপ্রাণিত হয়।’

হিমালয়ের চূড়ায় সাইকেলে চড়ে লাল-সবুজ পতাকা ওড়ানো এই কুমিল্লার ছেলেই আজ বাংলাদেশের গর্ব-পর্বতারোহী উজ্জ্বল, সত্যিই উজ্জ্বল করলেন দেশের মুখ।