মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে ১০ শর্ত, বাজার ধ্বংসের চেষ্টা
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে হলে রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের ১০টি শর্তপূরণের বিষয়ে বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি হতাশাগ্রস্ত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের কাছে এক বজ্রাঘাতের মতো। এমন শর্ত জুড়ে দেওয়ার মাধ্যমে শ্রমবাজার ধ্বংসের অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকরা। গতকাল সোমবার প্রবাসী কল্যাণ ভবনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে এ আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন তারা। এতে এই ১০টি শর্ত শিথিল করার পাশাপাশি জনশক্তি রপ্তানি খাত বাঁচাতে উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
গতকাল সোমবার ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে সাবেক এমপি ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক সভাপতি এমএইচ সেলিমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে স্মারকলিপি প্রদান করে। এ সময় উপদেষ্টা সমস্যা সমাধানে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। তিনি জানান, আজ মঙ্গলবার শর্তগুলো সংশোধন করে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে পাঠানো হবে।
এ সময় ৪৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলের বিষয়ে নেতৃবৃন্দ আলোচনা করেন এবং বাতিলের নির্দেশ প্রত্যাহার করার অনুরোধ করেন। উপদেষ্টা দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে পুনরায় বিস্তারিত পর্যালোচনাসাপেক্ষে পুনর্বিবেচনার আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে সৌদি আরবের বিএমইটি সমস্যা, তাকামূল সমস্যা ও নতুন কিছু শ্রমবাজার নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বায়রার সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আকবর হোসেন মঞ্জু, সাবেক সহ-সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব নুরুল আমিন ও বায়রা সিনিয়র সদস্য সাখাওয়াত হোসেন লিন্টু।
উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপিতে জনশক্তি রপ্তানিকারকরা বলেন, বিগত ২৯ অক্টোবর আপনার মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ করতে হলে রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের ১০টি ক্রাইটেরিয়া পূর্ণ করতে হবে। বিজ্ঞপ্তিটি সমস্যা ও হতাশাগ্রস্ত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের নিকট এক
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
বজ্রাঘাতের মতো। অপূরণযোগ্য, অবাস্তব, অপ্রয়োজনীয়, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শর্তগুলো ইতোমধ্যে দেশে এবং আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত হয়েছে এবং অনেক দেশের সরকার এই ক্রাইটেরিয়াকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশেষ করে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেবিনেট মিটিংয়ে রিক্রুটিং মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে মালয়েশিয়ার প্রদত্ত ১০টি ক্রাইটেরিয়া কঠিনভাবে প্রত্যাখ্যান করে ইতিবাচক আশা ব্যক্ত করেন এবং ওনার সরকার সর্বদা সেক্টরবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
প্রতিটি ক্রাইটেরিয়া বিশ্লেষণ করলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, এটা গোটা সেক্টরকে সামান্যসংখ্যক লোকের হাতে তুলে দেওয়া ও প্রকারান্তে সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। অতীতে যারা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের সিন্ডিকেট করে হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেÑ এই শর্তগুলা তাদের প্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রের অংশ। তাদের ঘৃণিত ও হীন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য মালয়েশিয়ার সরকারকে ব্যবহার করেছে। অতীতেও দুবার তারা একই কূটকৌশল অবলম্বন করে সফল হয়েছে।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে ক্রাইটেরিয়াগুলো অনেক ভালো ও মহৎ, কিন্তু বাস্তবে অপূরণযোগ্য। যে শর্ত পালন করা যাবে না, সেগুলো আরোপ করাও যাবে না। এই শর্তগুলো পালন করতে গেলে দেশের অভিবাসীকর্মীদের এবং হাজার হাজার জনশক্তি রপ্তানিকারকের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। অতীতের মতো অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, সিন্ডিকেট সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যবসা ক্ষুদ্র একটা গোষ্ঠীর কাছে বন্দি হয়ে যাবে, ৯৯ শতাংশ রিক্রুটিং এজেন্সি ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হবে।
তারা আরও বলেন, ১০ হাজার স্কয়ার ফিটের তিন বছরের স্থায়ী অফিস, পাঁচ বছরের অপারেটিং এক্সপেরিয়েন্স এবং সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নিজস্ব মালিকানাধীন ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন অত্যন্ত ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ ও জটিল। তিন বছরে ৩ হাজার কর্মী প্রেরণের শর্তটিও অবাস্তব। অনেক শ্রমবাজার দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ। যে কয়টি বাজার খোলা আছে, তার মধ্যেও বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেটে এবং বোয়েসেলের নিয়ন্ত্রণে। এমতাবস্থায় তিন বছরে ৩ হাজার কর্মী প্রেরণ করা অসম্ভব। ৯৯ শতাংশ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক কোনোভাবেই সব শর্ত পালন করতে পারবে না। তা ছাড়া বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের যে এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) হয়েছে তা এই ক্রাইটেরিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, আমরা ন্যায়ভিত্তিক, যুক্তিসঙ্গত, বৈষম্যহীন, প্রয়োজনীয় ও সম্মানজনক সব শর্ত মানতে রাজি আছি। সীমিতসংখ্যক লাইসেন্স অর্থাৎ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার খোলার চেষ্টা করা হলে তার পরিণতি হবে খুবই ভয়াবহ। তাই দেশের স্বার্থে, অভিবাসী কর্মীদের স্বার্থে এবং অভিবাসী কর্মীদের কারিগর রিক্রুটিং এজেন্সির স্বার্থে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের জন্য আপনার মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে যে ১০টি শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করে সব বৈধ এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ান শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
বিকল্প প্রস্তবে মালয়েশিয়া সরকারের উদ্দেশ্য যদি স্বল্পসংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিতে চায়, সেক্ষেত্রে শুধু সরকারি এজেন্সি বোয়েসেলকে একমাত্র এজেন্ট করে সব বৈধ লাইসেন্সধারীদের কর্মী পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ইতিপূর্বে এই নিয়মে লোক পাঠানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে বোয়েসেলকে অতিরিক্ত ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে না। এতে অভিবাসন ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে না। কম খরচে কর্মী যেতে সহায়ক হবে।
পরিশেষে আমরা আশা পোষণ করব যে, আপনার আন্তরিক ও দায়িত্বকালীন সময়ে স্বল্প অভিবাসন ব্যয় নিশ্চিত করনে প্রয়োজন ডাটা বেজের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারের যৌক্তিক অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করে মালয়েশিয়া শ্রমবাজার দ্রুত উন্মুক্ত করার জন্য আপনার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর পক্ষে স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন সাবেক এমপি ও বায়রার সাবেক সভাপতি এমএইচ সেলিম, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি রিয়াজ-উল-ইসলাম, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মো. নুরুল আমিন, সাবেক ক্রীড়া, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক সচিব রেহেনা পারভীন প্রমুখ।