বিড়ালের সঙ্গে নিষ্ঠুরতা

শাহজাহান আকন্দ শুভ
০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৪
শেয়ার :
বিড়ালের সঙ্গে নিষ্ঠুরতা

রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমন্ডিতে বোবা প্রাণী বিড়ালের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণের ঘটনা ঘটেছে। একটি দুটি নয়, ৪টি বিড়ালের চোখ তুলে ধানমন্ডি লেকপারে ফেলা হয়েছে। কয়েকজন প্রাণীপ্রেমী তাকওয়া মসজিদ এলাকার লেকপার থেকে বিড়ালগুলো উদ্ধার করে। এ ঘটনায় স্থানীয় প্রাণীপ্রেমীদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তারা নৃশংস এই আচরণের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। তাদের পক্ষ থেকে ধানমন্ডি থানায় লিখিত অভিযোগ করা হলে তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশ।

বর্বরতার শিকার চারটি বিড়ালের গলায় বেল্ট ও ঝুনঝুনি বাঁধা। এই বিড়াল ৪টি কারও পোষা, নাকি ধানমন্ডি লেকপারেই থাকেÑ এ ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত হতে পারেনি। কে বা কারা বিড়ালের সঙ্গে এমন নৃশংস আচরণ করল এ তথ্য এখনও বের হয়নি। তবে জড়িতদের শনাক্ত করতে ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদ এলাকার সব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখবে পুলিশ। ৪টি বিড়ালই বিড়ালপ্রেমীদের হেফাজতে রয়েছে। তারাই এখন বিড়ালদের চিকিৎসাসহ দেখভাল করছেন।

জানা গেছে, ২৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর ৪ দিনে এই ৪টি বিড়াল পাওয়া যায়। মমি চৌধুরী নামে এক নারী গত ৩০ অক্টোবর একটি বিড়াল পান লেকপারে। বিড়ালটির গলায় কলার পরানো। তার দুটো চোখই উপড়ে ফেলা হয়েছে। একই জায়গায় আরও ৩টি বিড়াল পাওয়া যায়। তাদেরও চোখ তুলে ফেলা হয়েছে। ৪টির মধ্যে একটি বিড়ালের পেটে বাচ্চা। তার একটি চোখ তুলে ফেলা হয়েছে। রুমানী বৈশাখী নামে এক বিড়ালপ্রেমী এই বিড়ালটির চিকিৎসাসহ দেখভালের দায়িত্ব পালন করছেন।

ধানমন্ডির বাসিন্দা ব্যারিস্টার মো. তৌফিকুল ইসলাম খান জানান, ধানমন্ডি থানায় অভিযোগ করার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তদন্তেই বেরিয়ে আসবে কে বা কারা বিড়ালগুলোর সঙ্গে এই নির্মম আচরণ করেছে। তিনি বলেন, এমনভাবে চোখ তুলে ফেলা হয়েছে দেখলে মনে হবে কোনো শিক্ষিত এবং প্রশিক্ষিত লোকের কাজ। অন্য কোথাও বিড়ালগুলোর চোখ তুলে এখানে ফেলা হতে পারে। সাইকোপ্যাথরাই সাধারণত এ ধরনের নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে। তিনি বলেন, অপরাধ বিজ্ঞানে বলা হয়, সাইকোপ্যাথরা মানুষের সঙ্গে অপরাধ করার আগে পশুপাখির ওপর দিয়ে এমন কাজ শুরু করে। কারণ, পশুপাখি বলতে বা প্রতিবাদ করতে পারে না।

বিড়ালের সঙ্গে নৃশংস আচরণের ঘটনার তদন্ত করছেন ধানমন্ডি থানার এসআই ইমরান। তিনি গত রাতে বলেন, কে বা কারা এ ঘটনা ঘটাল তা আমরা নানাভাবে তদন্ত করে দেখছি। আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলছি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে।

প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯-এর ৬ এবং ১০ (১) ধারা অনুযায়ী প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ১০ (১) ধারায় বলা হয়েছে, প্রাণীর ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে প্রাণী দেহের কোনো সংবেদনশীল টিস্যু অপসারণ করা হলে বা অঙ্গ কর্তন করা হলে অথবা শারীরিক কাঠামোর পরিবর্তন ঘটানো হলে বা ঘটাবার চেষ্টা করা হলে অথবা উক্ত কাজে সহায়তা করা হলে তা এই আইনের অধীন অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ১০ এর উপ-ধারা (১)-এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করলে অথবা অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।