পাওনা শোধ না করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এডিসি কাজ করিয়ে পাওনা ৯০ কোটি টাকা পরিশোধ না করায় আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় আদালত প্রতিষ্ঠানটির পাঁচজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ওই কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন- দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক কিউংজু কাং, ইয়ংকওয়ান চোই, জুয়োক ইয়াং, হিসোক কিম ও বাংলাদেশি নাগরিক মো. সায়েম চৌধুরী। তবে হিসোক কিম ও সায়েম চৌধুরী আপস মীমাংসার শর্তে আদালত থেকে জামিন পান বলে জানা গেছে।
প্লিয়াডিস কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কনসাল্টিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জুবায়ের আখতার চৌধুরী ঢাকা মহানগর আদালতে এই মামলা করেন। এক বছর আগে করা মামলায় জুবায়েরের দাবি, তাঁদের প্রতিষ্ঠানকে এডিসি সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করালেও চুক্তিমতো অর্থ পরিশোধ করেনি। দীর্ঘদিন ধরে অর্থ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন।
মামলাটির তদন্ত দেওয়া হয় পুলিশ বু্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। উপ-পরিদর্শক সৌরভ দে সরকারের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে পাওনার বিষয়টির সত্যতা মেলে। পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার পর প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
অভিযোগ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চুক্তি অনুযায়ী কাজ করিয়ে এডিসি পাওনা টাকা পরিশোধ করেনি। প্লিয়াডিসের দাবি অনুযায়ী, সম্পাদিত কাজের বিপরীতে তাদের পাওনা ৯০ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাওনা অর্থ আটকে রেখে বিদেশি কর্মকর্তারা দেশ-বিদেশে প্রকল্পসংক্রান্ত বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
এ বিষয়ে জুবায়ের আখতার চৌধুরী বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে বলা হয়Ñ আদালতের পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও পরোয়ানাভুক্ত কর্মকর্তারা আইন লঙ্ঘন করে দেশে প্রবেশ করে বিভিন্ন মাধ্যমে বৈঠক করেছেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ওই কর্মকর্তারা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে গোপনে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। বিশেষ করে কিউংজু কাং ২১ জুলাই দেশে প্রবেশ করে পরের কার্যদিবসে চলে যান। আদালতের পরোয়ানার পরও তাঁদের এমন কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি অবমাননা।
পরোয়ানাভুক্ত বিদেশি
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
কর্মকর্তাদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং বিভিন্ন মাধ্যমে বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য যাচাই করার অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।
জুবায়ের আক্তার চৌধুরী দাবি করেন, তাঁর সঙ্গে চুক্তি বরখেলাপ করা হয়েছে। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, আমি সাব কন্ট্রাক্টর হিসেবে টার্মিনাল-৩, মাল্টি-লেভেল কার পার্কিং (এমএলসিপি), এক্সপোর্ট কার্গো টার্মিনাল (ইসিটি), ইম্পোর্ট কার্গো টার্মিনাল (আইসিটি) ও অন্য ইউটিলিটি ভবন যেমন আইপিপি, আইপিআর, জেনারেটর হাউস, এসটিপি, ডব্লিউএসএস, পিডব্লিউটিপি, এজিএস, আরএফএফএস সাবস্টেশন, আরএফএফএস মেইন বিল্ডিংয়ে কাজ করেছি। চুক্তির বাইরেও অতিরিক্ত কাজ করানো হয়েছে। এসব কাজ বাবদ প্রায় ৯০ কোটি টাকার পাওনা অপরিশোধিত রয়েছে; যার মধ্যে মূল কাজের পাওনা এবং অতিরিক্ত সময় কাজ করানোর খরচ অন্তর্ভুক্ত। এ বকেয়া দিতে টালবাহানা করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।
বকেয়া বিল আদায়ের জন্য সিএনএম কোর্টে দুটি মামলা করেছেন বলে জানান তিনি। যার পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
জুবায়ের আরও জানান, সবকিছু জানিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি চিঠি দিয়েছেন এবং এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
চিঠির অনুলিপি আদালত, পুলিশ কমিশনার, মহাপরিচালক (ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট), সচিব (বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়) এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে।