কর বাড়ি এখন পাখির রাজ্য
হাজারো শামুক খৈল পাখির কিচিরমিচিরে মুখর শিবরামপুর
রাজবাড়ীর সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের শিবরামপুর গ্রামের কর বাড়িতে এখন অন্যরকম প্রাণচাঞ্চল্য। সারাদিন কিচিরমিচির ধ্বনি, গাছের ডালে ডালে নড়াচড়াÑ সব মিলিয়ে পুরো এলাকা যেন এক পাখির রাজ্য। উঁচু গাছের ডালে বাসা বেঁধেছে হাজার হাজার শামুক খৈল পাখি। নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে এখানে প্রজননও করছে তারা।
গত শনিবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কর বাড়ির বড় বড় গাছ পাখির বাসায় ভরে গেছে। গাছের সবুজ পাতা যেন সাদা পালকে ঢাকা। রাজবাড়ী শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের এই গ্রাম এখন অতিথি পাখির এক স্বর্গভূমি।
বাড়ির মালিক আকাশ কর বলেন, প্রথমে কয়েকটা পাখি এসেছিল। এখন তো শতাধিক গাছে কমপক্ষে ২০ হাজার শামুক খৈল, পানকৌড়ি আর নানা জাতের পাখি বাসা বেঁধেছে। পাশের খাল, ধানক্ষেত আর জমির শামুক-ঝিনুক খেয়েই ওরা বাঁচে। এই দৃশ্য প্রতিদিনই মন ভরে দেয়।
গ্রামবাসীর ভালোবাসায় বড় হচ্ছে এই পাখিগুলো। তারা যেন বুঝে গেছে মানুষের ভেতরেও আছে মমতা। তাই ভয় পায় না, মানুষের হাতের কাছেই গড়ে তোলে নিজের সংসার। গ্রামেরই দর্শনার্থী রবিউল রবি বলেন, “এত পাখি একসঙ্গে কখনও দেখিনি। সকাল-বিকাল ওদের কিচিরমিচির শুনে মনে হয় প্রকৃতিই যেন গান গাইছে। এখন এই গ্রাম সবাই ‘পাখির গ্রাম’ বলেই চেনে।” তবে এই স্বর্গরাজ্যে এখন কিছু দুষ্টচক্রের নজর পড়েছে। বিকাল থেকে সন্ধ্যার পর টর্চলাইট জ্বালিয়ে কিংবা পাথর ছুড়ে পাখিদের বিরক্ত করছে তারা। আবার কখনও দেখা যাচ্ছে, পাখি শিকারিরাও ঘোরাঘুরি করছে এলাকায়। আরাম ঘর জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি লিটন
চক্রবর্তী বলেন, যদি কোনো পাখি অসুস্থ হয়, আমরা বিনামূল্যে চিকিৎসা দিই। এগুলো আমাদের প্রকৃতিরই অংশ। ওদের বাঁচানো মানে প্রকৃতিকে বাঁচানো।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার জানান, অতিথি পাখিদের এই আশ্রয়কে পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তোলা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগকে নিয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কেউ যেন পাখিদের বিরক্ত না করে, সেজন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই পাখিরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শিবরামপুরের কর বাড়ি তাই এখন শুধু একটি বাড়ি নয়, এ যেন প্রকৃতির আশ্রয় ও জীবনের উচ্ছ্বাস আর মানুষ ও প্রাণের এক মায়াময় সহাবস্থান।