অসময়ে বৃষ্টি /

ধান ও সবজির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

আমাদের সময় ডেস্ক
০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৯
শেয়ার :
ধান ও সবজির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে দেশে টানা তিন-চার দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসহ ঘরবাড়ির উঠানেও পানি উঠে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বিশেষ করে রোপা আমন ধান মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। ফলন ঘরে তোলার আগমুহূর্তে আধাপাকা ধান শুয়ে পড়ায় চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। সরেজমিন বিভিন্ন জেলার তথ্য সংগ্রহ করে পাঠিয়েছেন আমাদের সময়ের প্রতিনিধিরা।

নওগাঁ : নওগাঁর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আলু আবাদের জন্য কোথাও কোথাও প্রস্তুত করা হয়েছিল জমি, কোথায় সদ্য রোপণ করা হয়েছে বীজ। বৃষ্টির জমিতেই জমেছে পানি। ফসল বাঁচাতে পানি সরানোর চেষ্টা করছেন কৃষকরা। শুধু আলু ক্ষেত নয়, আগাম জাতের শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, বেগুন, মুলাসহ বিভিন্ন শাকসবজির গাছও মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। যেসব ক্ষেতের সবজি এখনও ভালো রয়েছে, তা রক্ষায় প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষকরা। এ ছাড়া মাঠের আধাপাকা ধান হেলে পড়েছে, গড়াগড়ি খাচ্ছে পানিতে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হোমায়রা মণ্ডল বলেন, বৃষ্টি হলেও ভারী বর্ষণ হয়নি। সবেমাত্র আলু রোপণ শুরু হয়েছে। যেসব জমিতে আলু লাগিয়ে ৮-১০ দিন হয়েছে, সেগুলোর ক্ষতি হবে না। এ ছাড়া শীতকালীন সবজি ও ধানের খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। ধানের জন্য বৃষ্টি কিছুটা আশীর্বাদ। ক্ষেত থেকে পানি সরে গেলে কোনো সমস্যা হবে না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত শুক্রবার রাতে ৯ ঘণ্টা টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতায় ঘরবাড়ির জিনিসপত্র এবং মাঠে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেখানে ৫ উপজেলায় গড়ে ১৯১ মিলিমিটার মিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এই জেলায় ২ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান এবং ২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমির রবিশস্যের ক্ষতিসাধন হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী জানান, শুক্রবারের বৃষ্টিতে কিছু শীষ ফোঁটা রোপা আমন, সরিষা, মাসকালাই, মুড়ি পেঁয়াজ, শীতকালীন শাকসবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি নেমে গেলে তেমন উৎপাদনের প্রভাব পড়বে না, তবে পানি আটকিয়ে থাকলে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে।

গঙ্গাচড়া (রংপুর) : নিম্নচাপের প্রভাবে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় টানা তিন দিনের ভারী বৃষ্টিতে রোপা আমন ধান মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। ফলন ঘরে তোলার আগমুহূর্তে আধাপাকা ধান শুয়ে পড়ায় চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, হলুদ হয়ে আসা ধানের ক্ষেতগুলো বৃষ্টিতে লুটিয়ে পড়েছে। এতে ফলন ও ধানের গুণগত মান নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষকরা।

উপজেলার নোহালী ইউনিয়নের বৈরাতী এলাকার কৃষক সুজা মিয়া বলেন, শুয়ে পড়া ধান দ্রুত পোকা ধরবে। একবার পোকা ধরলেই ধান চিটা হয়ে যাবে। এত পরিশ্রমের ফসল এভাবে নষ্ট হতে বসেছে, ভাবতেই কষ্ট হয়। তবে উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ শাহিনুর ইসলাম বলেন, আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে।

কাউনিয়া (রংপুর) : রংপুরের কাউনিয়ায় টানা বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস বয়ে যাওয়ায় উঠতি আমন ধানের ক্ষেত মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এ ছাড়া ক্ষতির মুখে পড়েছে শীতকালীন আগাম শাকসবজি। ফলে কৃষকের মুখের হাসি ম্লান হতে বসেছে।

তানোর (রাজশাহী) : গত বুধবার ও শুক্রবার টানা ভারী বর্ষণের কারণে ঘরবন্দি হয়ে পড়েন জনসাধারণ। টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে আসা পানির ঢলে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও পুকুর খালে গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। তানোর উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া, কামারগাঁও, পাঁচন্দর ও কলমা ইউনিয়ন এবং তানোর পৌরসভায় রোপা আমন পাকা ধান ডুবে গেছে, এখনও ডুবতেই আছে। অপর দিকে শত শত পুকুর ভেসে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় গাছ পালা উপড়ে পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ার পাশাপাশি উপড়ে পড়েছে খুঁটি বিদ্যুৎহীন ছিল তানোর। ফলে হতাশায় কপালে ভাঁজ পড়েছে কৃষকদের।

উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, উপজেলায় রোপা আমনের চাষাবাদ হয়েছে ২২ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে। তবে ধান ডুবেছে পুরোপুরিভাবে ৪৬ হেক্টর এবং আংশিক ডুবছে ১৫৭ হেক্টর জমি। অবশ্য বৃষ্টির পানি একেবারে থেমে গেলে এর সঠিক হিসাব পাওয়া যাবে।

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার টানা তিন-চার দিনের বৃষ্টিতে মাটিতে নুয়ে পড়েছে রোপা আমন ধান। ফলন ঘরে তোলার আগমুহূর্তে আধাপাকা ধান মাটিতে নুয়ে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন লালমনিরহাটের আমন চাষিরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৫টি উপজেলাতেই কিছু আমন ধান নুয়ে পড়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৮৬ হাজার ৬৪৫ হেক্টরে আমনের আবাদ করা হয়েছে।

শনিবার ৫ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের আমনের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, হলুদ হয়ে আসা ধানের ক্ষেতগুলো মাটিতে মিশে গেছে। বিঘার পর বিঘা জমির ধান শুয়ে পড়ায় ফলন ও গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাইখুল আরেফিন বলেন, ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে এবং তারা কৃষকের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছেন।

দিনাজপুর : টানা বৃষ্টিতে ধানের পাশাপাশি শীতকালীন আগাম শাকসবজিসহ বিভিন্ন রবিশস্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরে তোলার ঠিক আগে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। কৃষকরা জানান, গত তিন-চার দিনের ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়ায় তারা ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফ আব্দুল্লাহ বলেন, আমন ধান ও আগাম রবি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, যেসব ধান শুয়ে পড়েছে, সেগুলো গুচ্ছ করে বেঁধে দিতে। এতে শীষে সরাসরি পানির প্রভাব কিছুটা কমবে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আফজাল হোসেন বলেন, এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বৃষ্টিপাতের ফলে প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত হয়েছে ধান ৫৮১ হেক্টর, আগাম আলু ২২.৫ হেক্টর, আগাম সবজি ২৩.৫ হেক্টর। ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণের কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।

দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত পেঁছেছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।