নিরপেক্ষতার পরীক্ষায় সরকার এখনো পাস করতে পারেনি: সাইফুল হক

নিজস্ব প্রতিবেদক
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:৩২
শেয়ার :
নিরপেক্ষতার পরীক্ষায় সরকার এখনো পাস করতে পারেনি: সাইফুল হক

নিরপেক্ষতার পরীক্ষায় সরকার এখনো পাস করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। শনিবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংহতি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সাইফুল হক বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশসমূহ কেন্দ্র করে ঐক্যের পরিবর্তে আরও অনৈক্য দেখা দিয়েছে। ভিন্নমতের বিষয়সমূহ পুরোপুরি বাদ দিয়ে সুপারিশ প্রেরণ করায় কমিশনের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণার গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এটা অনভিপ্রেত, দুঃখজনক ও বিব্রতকর।’

তিনি বলেন, ‘কমিশনের সুপারিশে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনে সরকার যেভাবে সংবিধান সংশোধন আদেশ প্রদানের কথা বলা হয়েছে, তাও পুরোপুরি অগ্রনযোগ্য। কারণ এই ধরনের কোনো ক্ষমতা, এখতিয়ার বা ম্যান্ডেট অন্তর্রর্তী সরকারের নেই। এই ধরনের উদ্যোগ হবে প্রকারান্তরে সংবিধান অস্বীকার করার শামিল। তাছাড়া সংবিধান সংশোধনের এই ধরনের আদেশ এক ভয়ংকর নজিরও সৃষ্টি করবে। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সংবিধান সংশোধনে এই উদাহরণকে ব্যবহার করার আশংকা থাকবে ।এই ধরনের পদক্ষেপ পরোক্ষভাবে বরং কতৃত্ববাদী শাসনের রাস্তা খুলে দিতে পারে।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গণভোটের প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে অধিকাংশ দল আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট অনুষ্ঠানে মতামত দিয়েছিল। বাস্তবে গণভোটের প্রশ্নে এর অন্যথা হবার সুযোগ নেই। তাছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে আর একটা নির্বাচন করার সময় ও সামর্থ্য সরকার বা নির্বাচন কমিশনের নেই। আর কোনো কারণে গণভোটে ভোট প্রদানের হার স্বল্প হলে তা রাজনৈতিক দিক থেকে বিরাট বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ’

তিনি বলেন, ‘কমিশনের সুপারিশে ২৭০ দিনের মধ্যে সকল ইস্যুসমূহ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সম্পন্ন না হলে যেভাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাওয়ার কথা হয়েছে তা রীতিমতো উদ্ভট ও হাস্যকর। সংবিধান সংশোধন নিয়ে এই ধরনের ছেলেখেলার কোনো অবকাশ নেই।’

সাইফুল হক বলেন, ‘সরকারের একটা ভুল পদক্ষেপ যেমন পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যেতে পারে, আবার তাদের একটা পদক্ষেপ সংকটের উত্তরণ ঘটাতে পারে। আমরা আশা করব সরকার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শীতার পরিচয় দেবেন। সরকারের উচিৎ হবে  অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত ও আকাঙ্ক্ষা বিবেচনায় রেখে বাস্তবানুগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। সরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ‘

তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষতার পরীক্ষায় সরকার এখনো পাস করতে পারেনি। এই পরীক্ষায় সরকারের ফেল করার সুযোগ নেই। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সরকারকে দ্রুত যাবতীয় পক্ষপাতদুষ্টতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রকৃতপক্ষে দলনিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের বৈশিষ্ঠ অনুযায়ী কাজ করতে হবে।’

সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি যে, সরকারের মধ্যে থাকা সরকারগুলো ভেঙে দেওয়া দরকার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সমগ্র প্রশাসনকে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন সরকারের কার্যকরী নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা প্রয়োজন। সমগ্র প্রশাসনকে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে ঢেলে সাজাতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, কেন্দ্রীয় সদস্য সিকদার হারুন মাহমুদ, যোবরান আলী জুয়েল, বাবর চৌধুরী, ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন, আরিফুল ইসলাম আরিফ প্রমুখ।

আমাদের সময়/জেআই