বাংলাদেশে আসতে না পেরে ভারতে গৃহবধূর আত্মহত্যা
বাংলাদেশে বাবার বাড়িতে আসতে না পেরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা ব্যারাকপুরে গায়ে আগুন ধরিয়ে কাকলি সরকার (৩৩) নামের এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাতে ব্যারাকপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কাকলির স্বামী, শ্বশুর ও ভাসুরকে আটক করেছে পুলিশ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, ১৫ বছর আগে সবুজ সরকারের সঙ্গে বিয়ের পর বাংলাদেশের নবাবগঞ্জ থেকে ব্যারাকপুরে আসেন কাকলি। গত ২৭ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর চালু হওয়ার পর থেকে সবুজ-কাকলির পরিবার আতঙ্কে ছিল। অন্যদিকে, বেশ কিছু দিন ধরে তাকে বাংলাদেশ নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বামীকে বলছিলেন কাকলি। কিন্তু সবুজ বলেছিলেন, এসব ‘ঝামেলা’ মিটে গেলে বাংলাদেশে যাবেন।
কাকলির শাশুড়ি শিবানী সরকার বলেন, ‘কাল (বৃহস্পতিবার) রাত ৮টা নাগাদ ছাদে গিয়ে কাকলি গায়ে আগুন ধরিয়েছে। ও বাপের বাড়ি যেতে চেয়েছিল। বাংলাদেশে বাপের বাড়ি। বাবার অসুখ। দেখতে চেয়েছিল তাকে। আমরা না বলিনি। কিন্তু এই গোলমালের মধ্যে বাচ্চাদের নিয়ে যেতে বারণ করেছিলাম। তার পর থেকে বলে যাচ্ছিল, ‘‘আমার ভালো লাগছে না। আমি বাংলাদেশ যেতে চাই। আত্মহত্যার আগে একটা চিঠি লিখে গিয়েছে। কাউকে দায়ী করেনি।’
পুলিশ জানিয়েছে, গৃহবধূর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় মামলা রুজু হয়েছে। নিহতের স্বামী সবুজ সরকার, শ্বশুর সুরেশ সরকার ও ভাসুর শান্তি সরকারকে আটক করা হয়েছে। ওই গৃহবধূ ঠিক কী কারণে মারা গেলেন, তা নিয়ে তদন্ত চলছে।
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দ্রবদন ঝা বলেন, টিটাগড় থানা এলাকায় কাকলি সরকারের মৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা গিয়েছিলেন। তল্লাশির সময় বাড়ি থেকে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ বেশ কিছু জিনিস বাজেয়াপ্ত করেছে। অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।’
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (এসআইআর) ঘোষণার পর অনেকেই আতঙ্কে আছেন। কয়েকটি আত্মহত্যার পেছনে এসআইআর আতঙ্ক দায়ী বলে দাবি করেছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার দাবি, এসআইআর ঘোষণার পর ভয় পেয়ে রাজ্যের দুই বাসিন্দা আত্মহত্যা করেছেন। উত্তর ২৪ পরগনার প্রদীপ সরকারের পরে বীরভূম জেলার ইলামবাজারে ক্ষিতীশ মজুমদার আত্মহত্যা করেছেন।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মমতা লিখেছেন, ‘প্রত্যেক নাগরিককে বলছি, বিশ্বাস হারাবেন না। কোনো চূড়ান্ত পদক্ষেপ করবেন না। আমাদের সরকার আপনার পাশে আছে। আমরা বাংলায় এনআরসি হতে দেব না। সামনের দরজা দিয়েও নয়, পেছনের দরজা দিয়েও নয়। একজন বৈধ নাগরিককেও আমরা ‘‘বহিরাগত’’ তকমা পেতে দেব না। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করব। বিজেপি আর তার জোটসঙ্গীদের উদ্দেশ্যকে সফল হতে দেব না।’
তবে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দাবি, এসআইআর হলে বৈধ ভোটারদের নাম কোনোভাবে বাদ পড়বে না। তারা তৃণমূলের বিরুদ্ধে অযথা আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছে।
আমাদের সময়/জেআই
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস