ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য অ্যান্ড্রুর ‘প্রিন্স‘ উপাধি বাতিল, ছাড়তে হবে রাজপ্রাসাদও
ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সব রাজকীয় উপাধি বাতিল করা হয়েছে এবং তাকে উইন্ডসরের রয়্যাল লজ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাকিংহাম প্যালেস বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাজা তৃতীয় চার্লসের সিদ্ধান্তে এখন থেকে তিনি ‘অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন উইন্ডসর’ নামে পরিচিত হবেন।
রাজপরিবারের সুনাম রক্ষায় নেওয়া এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে অ্যান্ড্রুর সঙ্গে প্রয়াত মার্কিন ব্যবসায়ী ও দোষী সাব্যস্ত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত যৌন নিপীড়নের অভিযোগ। রাজা চার্লসের এই সিদ্ধান্তে প্রিন্স অব ওয়েলসের সমর্থন রয়েছে এবং অ্যান্ড্রু এ প্রক্রিয়ায় আপত্তি জানাননি বলে জানিয়েছে প্রাসাদ।
রাজকীয় মর্যাদা হারালেন ‘ডিউক অব ইয়র্ক’
অ্যান্ড্রুর কাছ থেকে ‘প্রিন্স’, ‘ডিউক অব ইয়র্ক’, ‘আর্ল অব ইনভারনেস’ এবং ‘ব্যারন কিলিলেয়াঘ’ উপাধিগুলোসহ ‘হিজ রয়্যাল হাইনেস’ উপাধিও প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া তার ‘অর্ডার অব দ্য গার্টার’ ও ‘নাইট গ্র্যান্ড ক্রস অব দ্য রয়্যাল ভিক্টোরিয়ান অর্ডার’-এর মতো সম্মাননাও বাতিল করা হয়েছে।
প্যালেসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বেদনাদায়ক হলেও রাজপরিবার মনে করে এটি অপরিহার্য। তাদের সহানুভূতি সবসময় থাকবে যৌন নিপীড়নের শিকার ভুক্তভোগীদের পাশে।’
রয়্যাল লজ ছাড়তে হবে অ্যান্ড্রুকে
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
অ্যান্ড্রু গত কয়েক দশক ধরে উইন্ডসরের ৩০ কক্ষবিশিষ্ট রয়্যাল লজে বসবাস করে আসছিলেন। এখন তাকে সেখানে থেকে উচ্ছেদের আনুষ্ঠানিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, রাজা চার্লস নিজস্ব তহবিল থেকে অ্যান্ড্রুর জন্য নরফোকের স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটে একটি বাড়ির ব্যবস্থা করছেন।
তার প্রাক্তন স্ত্রী সারাহ ফার্গুসনকেও রয়্যাল লজ ছাড়তে হবে বলে প্যালেস সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগ ও প্রতিক্রিয়া
অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ভার্জিনিয়া জিউফ্রে দাবি করেছিলেন, অ্যান্ড্রু তার অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেছিলেন। যদিও অ্যান্ড্রু অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং আদালতের বাইরে প্রায় ১২ মিলিয়ন পাউন্ডে বিষয়টি মিমাংসা করেন।
জিউফ্রের পরিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আজ ভার্জিনিয়া নিজের সত্য ও সাহসের মাধ্যমে এক ব্রিটিশ প্রিন্সকে নতজানু করেছে। এটি তার লড়াইয়ের ন্যায্য ফল।’
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
ব্রিটিশ কনজারভেটিভ নেতা কেমি বাদেনক বলেন, ‘এটি নিশ্চয়ই রাজার জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল, কিন্তু যৌন নির্যাতনের অভিযোগ সমাজে সহ্য করা যায় না।’
অন্যদিকে, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী লিসা ন্যান্ডি বিবিসিকে বলেন, ‘রাজার এই পদক্ষেপ সাহসী, প্রয়োজনীয় এবং সঠিক। এটি ভুক্তভোগীদের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে।’
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্য সুহাস সুব্রামনিয়াম অ্যান্ড্রুকে আহ্বান জানিয়েছেন, তিনি যেন এপস্টেইন ও গিসলেইন ম্যাক্সওয়েলের অপরাধ সম্পর্কে তার জানা তথ্য প্রকাশ করেন।
সারকথা
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাজা চার্লস স্পষ্ট বার্তা দিলেন—রাজপরিবারের মর্যাদার ওপরে কেউ নয়। প্রিন্স অ্যান্ড্রুর এই পতন ব্রিটিশ রাজতন্ত্রে দীর্ঘদিনের বিতর্কের অবসান ঘটালেও, এর প্রভাব রাজপরিবারের ভাবমূর্তিতে গভীর ছাপ ফেলবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
আমাদের সময়/জেআই