ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ১০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর
প্রতিরক্ষা খাতে নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার জন্য আগামী ১০ বছরের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ বিষয়ক সচিব পিট হেগসেথ ও ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের মধ্যে এক বৈঠকের পর এই চুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
পিট হেগসেথ শুক্রবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, দুটি দেশের মধ্যে এই চুক্তি যেমন "সহযোগিতা, তথ্য আদান-প্রদান আর কারিগরি সহযোগিতা" বৃদ্ধি করবে, তেমনই "আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা আর প্রতিরোধ" গড়ে তুলবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপরে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেওয়ার ফলে দুটি দেশের মধ্যে যে উত্তেজনা তৈরিই হয়েছিল, তা কাটিয়ে উঠে তারা যখন বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার পথে এগোচ্ছে, তার মধ্যেই এই প্রতিরক্ষা বিষয়ক চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলো।
ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার বৃহত্তর পরিসরের সবকিছুকেই এই চুক্তিটি নীতি নির্দেশনা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
রাজনাথ সিং তার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘কৌশলগত দিক থেকে আমরা যেভাবে আরও বেশি করে কাছাকাছি আসছি, তারই ইঙ্গিত এই চুক্তি। অংশীদারিত্বের এক নতুন দশক শুরু হলো। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রতিরক্ষা খাত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে থাকবে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে যাতে একটি উন্মুক্ত, স্বচ্ছ এবং নিয়মনীতি মেনে চলা এলাকা হিসাবে নিশ্চিত করা যায়, তার জন্য আমাদের অংশীদারিত্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
থিংক ট্যাংক 'ইউরেশিয়া গ্রুপ'-এর বিশ্লেষক প্রমিত পাল চৌধুরী বিবিসিকে বলেছেন, ‘এই চুক্তিটি জুলাই-অগাস্ট মাসেই সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, তবে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ সমাপ্ত করা নিয়ে ট্রাম্পের একের পর এক মন্তব্যের কারণে ভারত বিরক্ত হওয়াতেই দেরি হয়েছে।’
প্রমিত পাল চৌধুরি আরও বলছেন, ‘দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে আদান-প্রদান সহজতর করা, ভারত যাতে কারিগরি ক্ষেত্রে আরও প্রবেশাধিকার পায় এবং দুই দেশের সামরিক খাত যাতে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একাধিক চুক্তি রয়েছে, তাতে এটি সর্বশেষ সংযোজন। এই তিনটি বিষয়েই আরও সম্ভাবনা তৈরি হলো।’
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
ভারত আর যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন, সেই সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার আলোচনার একটি বড়ো বিষয় ছিল সামরিক খাত।
ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির পরিমাণ অনেক বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি করবে। তারই অংশ হিসাবে এফ-থার্টি ফাইভ যুদ্ধ বিমান পেয়েছে দিল্লি।
তবে তার পর রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় কেনা তেলের ওপরে দিল্লির নির্ভরশীলতা আর মস্কোর সঙ্গে দীর্ঘদিনের সামরিক সম্পর্ক ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে বিরক্তির কারণ ঘটিয়েছে।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
যদিও এখনও ভারতের কাছে অস্ত্র বিক্রেতাদের মধ্যে রাশিয়া একটা বড়ো জায়গা দখল করে আছে, তবে ভারতের সামরিক সরঞ্জাম আমদানি ক্রমশ কমছে, কারণ দিল্লি চাইছে তাদের অস্ত্রসম্ভারে বৈচিত্র্য আসুক আর দেশীয় উৎপাদনও বৃদ্ধি পাক। ভারত অবশ্য সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শক্তি ও সামরিক খাতে আমদানি আরও বাড়াতে ইচ্ছুক।
আমাদের সময়/আরডি