জুলাই সনদে বিএনপির স্বাক্ষরের কাগজ নেই, এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা: রিজভী

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:২৭
শেয়ার :
জুলাই সনদে বিএনপির স্বাক্ষরের কাগজ নেই, এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ স্বাক্ষর চুড়ান্ত করা হলো, সেখানে বিএনপির স্বাক্ষরের কাগজ নেই। এটা জাতির সাথে প্রতারনার শামিল।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে রাজবাড়ী সদরের পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের খোলাবাড়িয়া গ্রামের জন্মান্ধ গফুর মল্লিকের (৮০) বাড়িতে গিয়ে সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘১৬ বছর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এক আপোষহীন সংগ্রাম করা হয়েছে। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা, মুক্ত কন্ঠে আমাদের মিছিল করার স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য আমরা লড়াই করেছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যখন অসুস্থ করা হলো, বন্দী করা হলো, তার যখন চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া হলো, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া হলো। কারাগারে নেওয়া হলো। তখন তারেক রহমান ভার্চুয়ালি প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। বিজয়ের পথকে সুগম করেছেন। ৫ আগস্ট সেই ভয়াবহ রক্ত পিপাসু শেখ হাসিনার পতন হয়। মানুষ চেয়েছে, তার স্বাধীনতা, অধিকার প্রয়োগ করতে। শেখ হাসিনার আমলের চেয়ে একটু বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সামগ্রীক স্বাধীনতা ভোগ করার জন্য আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্টু হবে কি না, কারিগরি হবে কি না, কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং হবে কি না। জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ স্বাক্ষর হলো, যখন স্বাক্ষর করেছে সব রাজনৈতিক দল, দেখা গেল সেখানে বিএনপি যে পাতা স্বাক্ষর করেছে, সেটা নেই। এটা দুঃখজনক কথা। ড. ইউনুসকে সবাই সম্মান করে। তার নেতৃত্বে সরকার তাকে তো বিএনপিসহ আন্দোলনরত সব দল সাপোর্ট করে। তার গঠন করা বিভিন্ন কমিশনের দ্বারা এ ধরনের প্রতারণামূলক কাজ সমর্থন করে না। জুলাই সনদে ৪৭-৪৮টি ধারা রয়েছে, তার মধ্যে কিছু ধারা আইনি করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এখন আছে এক কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট, দ্বিকক্ষ করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। যে প্রস্তাবগুলো আছে এতে সংবিধান বাতিল করতে হবে। নতুন করে নতুন সংবিধান করবেন, না সংবিধানের নিয়ম স্বাধীনতার পর জনগণ ও সমাজের তাগিদ অনুযায়ী সেটা সংশোধিত হতে হয়। এটা আমেরিকান, ভারতে হয়েছে। জনমতের প্রতিফলন নিশ্চিত করার জন্য যেটা প্রয়োজন সেটা করতে হবে।’

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘কিন্তু ২৭০ দিনের মধ্যে পার্লামেন্ট গঠনের পর পাশ না হলে সেটা অটোমেটিক পাশ হবে। পৃথিবীর কোনো দেশে এ ধরনের কোনো ঘটনা নেই, এককেন্দ্রীক, একদলীয় কর্তৃত্ববাদী দেশে সম্ভব। পার্লামেন্ট নির্বাচনের কি দরকার, গণভোট কি দরকার। সত্যিকার গণতন্ত্রের জন্য অফুরান্ত লড়াই আবু সাঈদ, মুগ্ধ, আহনাফ, ওয়াসিম আকরাম জীবন দিল, তার ঐকমত্য কমিশনের এ ধরনের ভেজাল, জনগণের সঙ্গে একটি প্রতারণামূলক জুলাই সনদ কিভাবে হয়। আমরা নিরাশাবাদী নই, আমরা আশাবাদী। জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, সংবিধান অনুযায়ী করতে হবে। আওয়ামী লীগ আসলে একরকম, বাকশাল আসলে একরকম, সংবাদপত্র নিষেধ করেছেন। জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র, মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছেন। গণতন্ত্র ও ধর্মীয় মূল্যবোধ জিয়াউর রহমান দিয়েছেন। নতুন সংবিধান করতে চান, সেটা অন্য জিনিস। জুলাই সনদে, সংবিধানের মধ্যে যেটা করা হয়েছে, সেটা পার্লামেন্টের মাধ্যমে পাশ করতে হবে। এভাবে আমরা সুন্দর রাষ্ট্র করতে পারব না। এখানে বহু ষড়যন্ত্রকারীরা কাজ করছে। বিএনপির ৪৫০-৫০০ লোক মারা গেছে। আমরা জনগণের জন্য কাজ করব। গণতান্ত্রিক শাসনে আমরা কাজ করব। আগে খাতায় না লিখলেও পাশ করে দেওয়া হতো, এবার এইচএসসির রেজাল্ট দেখেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের খোলাবাড়িয়া গ্রামের বৃদ্ধ গফুর মল্লিক বেঁচে থাকার সংগ্রামে লড়ছেন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর পেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারেক রহমানের নির্দেশে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সংগঠনের একটি প্রতিনিধিদল গফুর মল্লিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছি।’

এ অনুষ্ঠানে আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের নেতৃত্বে সংগঠনটির উপদেষ্টারা, সদস্য সচিব ও সদস্যরা, রাজবাড়ী-২ আসনের ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশীদ, রাজবাড়ী-১ আসনের ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী রাজবাড়ী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সভাপতি অ্যাড. মো. আসলাম মিয়া, রাজবাড়ী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেদ পাভেলসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গফুর মল্লিক জীবনের অধিকাংশ সময় বাসে ও ট্রেনে ফেরি করে নারকেলের নাড়ু, টেস্টি হজমি ও বাদাম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। যিনি কখনোই ভিক্ষা করতে চাননি। বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে গেছেন এবং শরীরের অধিকাংশ শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। স্ত্রীকে নিয়ে সংসার হলেও তাদের কোনো সন্তান নেই। নিজের সম্মান রক্ষার্থে আজও কাজ করে যাচ্ছেন, এমনকি নিজের হাতে তৈরি করা নারকেলের নাড়ু ও বাদাম বিক্রি করেই জীবন ধারণ করছেন তিনি।

এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে গফুর মল্লিকের কষ্টের জীবন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। বিষয়টি নজরে আসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। 

আমাদের সময়/আরডি