সঞ্চয়পত্রের সার্ভার ব্যবহার করে অভিনব জালিয়াতি
সঞ্চয়পত্রের সার্ভার ব্যবহার করে অভিনব জালিয়াতির মাধ্যমে একজন গ্রাহকের ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এই সঞ্চয়পত্র জালিয়াতি হয় বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বিষয়টি নজরে আসার পর বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পক্ষ থেকে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের যে তিনজন কর্মকর্তার কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পাসওয়ার্ড ছিল, তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নতুন তিনজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে রাজধানীর মতিঝিল থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি জানতে পারার পরপরই একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পাশাপাশি মতিঝিল থানায় জিডি করা হয়েছে। মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। তবে একটি জিডি করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা
গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে গত বৃহস্পতিবার ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনেন এক ব্যক্তি। তাঁর ব্যাংক হিসাবটি আছে অগ্রণী ব্যাংকের জাতীয় প্রেসক্লাব শাখায়। চার দিনের মাথায় গত সোমবার এই সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হয় এবং টাকা নেওয়া হয় এনআরবিসি ব্যাংকের দিনাজপুর উপশাখার অন্য এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে। ওই টাকা একই দিনে ব্যাংকটির ঢাকার শ্যামলী শাখা থেকেও তুলে নেওয়া হয়। একই প্রক্রিয়ায় একই দিনে ডাচ্?-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৩০ লাখ ও এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বিষয়টি টের পেয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জালিয়াতি ঠেকাতেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ ঘটনার পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংক চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন এবং রাজধানীর মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। সেই সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও এনআরবিসি ব্যাংকের পক্ষ থেকেও পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ঘটনার জন্য সার্ভারের নাকি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ক্রটি রয়েছে, তা খতিয়ে দেখবে তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
২০১৯ সালে একই নামে একাধিক সঞ্চয়পত্র কেনা ঠেকাতে ‘জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালু করে সরকার। এর মাধ্যমে যেখান থেকেই সঞ্চয়পত্র কেনা হোক, একটি ডেটাবেজে তার তথ্য জমা হয়। ফলে কেউ একই নামে একাধিক জায়গা থেকে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারে না। নিয়ম অনুযায়ী সঞ্চয়পত্র ভাঙানো বা ব্যাংক পরিবর্তনের জন্য গ্রাহককে ক্রয়কৃত শাখায় আবেদন করতে হয়। তবে এই ২৫ লাখ টাকার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে কোনো আবেদন আসেনি। ফলে অভ্যন্তরীণ কারও যোগসাজশ, নাকি সেন্ট্রাল সার্ভারে হ্যাকিং করে এটি করা হয়েছেÑ এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সঞ্চয়পত্র কেনার সময় গ্রাহক একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দেন। মাসে মাসে তার সুদ ওই অ্যাকাউন্টে চলে যায়। মেয়াদ পূর্ণ হলে পুরো অর্থও ওই অ্যাকাউন্টে যায়। তবে সম্প্রতি বেশ কিছু ব্যাংকে সংকট তৈরি হওয়ায় অনেকে টাকা তুলতে পারেননি। এ অবস্থায় যেখান থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা হয়েছে, সেখানে আবেদনের মাধ্যমে গ্রাহককে ব্যাংক পরিবর্তন করার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে এই ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনার সময় গ্রাহক যে অ্যাকাউন্ট দিয়েছেন, তা অটো পরিবর্তন হয়ে গেছে। ঘটনায় সংশ্লিষ্ট গ্রাহক জানিয়েছেন, তিনি অ্যাকাউন্ট পরিবর্তনের কোনো অনুরোধ করেননি।
বর্তমানে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের চার ধরনের সঞ্চয়পত্র চালু আছে। এগুলো হলো- পরিবার সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা, জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ডাকঘর থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা ও ভাঙানো যায়।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?