‘আমি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, পারলে আপনারা কিছু করেন’
কুমিল্লার মুরাদনগরে আবুল কাশেম নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতারণা করে নাম পাল্টিয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগের অভিযোগ উঠেছে।
আবুল কাশেম উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন পূর্বধইর পশ্চিম ইউনিয়নের হাটাশ গ্রামের মৃত আলীমুদ্দিনের ছেলে। তিনি টাকার বিনিময়ে আবুল কালাম আজাদ নাম ধারণ করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করছেন এবং নিয়মিত সরকারি ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন।
এ ঘটনায় একই গ্রামের শহিদুল হক মাষ্টারের মেয়ে শামিরা জান্নাত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগপত্রে শামিরা জান্নাত সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, অভিযুক্ত আবুল কাশেম প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। তিনি ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি গেজেটভুক্ত হন। অভিযোগকারী জোর দিয়ে বলেছেন, আবুল কাশেম কখনোই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি, বরং ভুয়া সনদ ব্যবহার করে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামকে কুলষিত করেছেন।
আবুল কাশেমের আসল পরিচয় প্রমাণের জন্য শামিরা জান্নাত একাধিক নথি অভিযোগপত্রের সঙ্গে দাখিল করেছেন। এর মধ্যে ১৯৬৬-৬৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র, সম্পত্তি বেচা-কেনার দলিল এবং খারিজ খতিয়ানের একাধিক কপি, যেখানে বার বার তার নাম আবুল কাশেম হিসেবেই লিপিবদ্ধ রয়েছে। এসব প্রমাণাদি ইঙ্গিত করে যে, সরকারি সুবিধা লাভের জন্য তিনি নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণ করেছেন।
এই অভিযোগের সত্যতা জানতে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে আবুল কাশেমের অতীতের আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। স্থানীয় মোহন মিয়া জানান, ১৯৯৬ সালে আবুল কাশেম ৩২ জন নিরীহ মানুষকে মালয়েশিয়া নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে কোনো কাজের ব্যবস্থা না করে তিনি তাদের একটি জঙ্গলে ফেলে রেখে পালিয়ে আসেন।
তিনি আরও জানান, তারা জঙ্গলে মানবেতর জীবনযাপন করে পায়ে হেঁটে সিঙ্গাপুরে পৌঁছলে সেখানকার পুলিশ তাদের আটক করে ২০ দিন জেলখানায় রেখে দেশে ফেরত পাঠায়। তিনি দাবি করেন, সে সময় আবুল কাশেমের পাসপোর্টে তিনি 'রাজু' নাম দেখেছিলেন এবং তাকে একজন 'ভণ্ড প্রতারক' হিসেবে আখ্যা দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী বলেন, ‘আমরা তাকে আবুল কাশেম নামেই চিনি। সে যদি আসল মুক্তিযোদ্ধা হতো, তাহলে কেন শাহাজাহান নামের আরেক মুক্তিযোদ্ধার সনদ ব্যবহার করে তার মেয়েকে রেলওয়েতে চাকরি দিতে হলো কেন? এটিই প্রমাণ করে সে একজন প্রতারক।’
মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহানের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমার সন্তানকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ প্রতারণার মাধ্যমে তার মেয়েকে রেলওয়েতে চাকরি পাইয়ে দিয়েছে। সে যদি আসল মুক্তিযোদ্ধা হতো, তাহলে এমন জঘন্য প্রতারণা করতে পারত না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আবুল কাশেম সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। একপর্যায়ে তিনি ক্ষীপ্ত হয়ে বলেন, ‘আমি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, পারলে আপনারা কিছু করেন।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘আবুল কাশেম নামের অভিযোগটি পেয়েছি। বিষয়টি উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’
অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আবুল কাশেম কোনো প্রকার সহযোগিতা না করায় তদন্ত কাজ বিলম্ব হচ্ছে। আশাবাদী চলতি সপ্তাহেই প্রতিবেদন দিতে পারব।’
এই ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও গুঞ্জন সৃষ্টি করেছে। প্রশাসনের দ্রুত তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে সত্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন অভিযোগকারী ও এলাকাবাসী।
আমাদের সময়/আরডি