আত্মহত্যা নয়, পরিকল্পিত হত্যা! —পিবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে প্রাণ দাসের (২৫) মৃত্যুকে প্রথমে আত্মহত্যা বলে দাবি করা হলেও, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—‘এটি আত্মহত্যা নয়, বরং পরকীয়ার জেরে সংঘটিত এক সুপরিকল্পিত হত্যা।’
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে চারটায় দিনাজপুর পিবিআই কার্যালয়ে এক প্রেস কনফারেন্সে অ্যাডিশনাল ডিআইজি মাহফুজ্জামান আশরাফ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রাণ দাস হত্যাকাণ্ডটি প্রথমে আত্মহত্যা হিসেবে চালানোর চেষ্টা করা হলেও, আমাদের তদন্তে প্রমাণ মেলে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’
গত ২০ অক্টোবর বীরগঞ্জ থানায় ৩০২/৩৪ দণ্ডবিধি অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়। নিহত প্রাণ দাসের মা সারতী রাণী দাস এক হতদরিদ্র দিনমজুর, শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন যে তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। বহুবার থানায় গিয়েও কোনো সঠিক তদন্ত না পাওয়ায় তিনি শেষ পর্যন্ত গত ৩১ জুলাই পিবিআই দিনাজপুরের কাছে আবেদন করেন।
পরে পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসে, ঘটনার দিন প্রাণ দাসকে হত্যা করেন তার শ্বশুর নিপেন্দ্র নাথ রায়, শাশুড়ি জোসনা রানী, স্ত্রী পূজা রাণী দাস এবং ভায়রা দিপু রায়। হত্যার পর তারা ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। শাশুড়ি প্রথমে থানায় গিয়ে “ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে আত্মহত্যা” বলে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন।
তবে পিবিআই দিনাজপুরের এসআই (নিরস্ত্র) মো. মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে পরিচালিত ছায়া তদন্তে সত্য উদ্ঘাটিত হয়। প্রমাণ মেলে, এটি ছিল একটি সুনিপুণভাবে সাজানো হত্যাকাণ্ড। পরবর্তীতে ২০ অক্টোবর রাতে চারজন আসামিকে বীরগঞ্জ উপজেলার ডাকেশ্বরী গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আদালতের অনুমতিক্রমে জিজ্ঞাসাবাদে দিপু রায় ও পূজা রাণী দাস হত্যার কথা স্বীকার করেন। দিপুর জবানবন্দি অনুযায়ী, পূজা রাণীর পরকীয়া সম্পর্কের জেরে পারিবারিক কলহ থেকে প্রাণ দাসকে হত্যা করা হয়। পরে দিপুর ঘর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ইট তৈরির ফার্মা ও খাট জব্দ করে পুলিশ।
তদন্তের নেতৃত্বে ছিলেন পিবিআই দিনাজপুরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ। তিনি বলেন, ‘পিবিআই সবসময় গুরুত্বপূর্ণ মামলার সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তে কাজ করে আসছে। এই মামলাটি ছিল এক অসহায় মায়ের কান্নার প্রতিদান। আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যেই প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছি। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে পিবিআইয়ের প্রতি আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে।’
প্রেস কনফারেন্সে ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজ, সাব-ইন্সপেক্টর মেহেদী হাসানসহ আরও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল বীরগঞ্জের শ্বশুরবাড়ীতে রহস্যজনক মৃত্যু হয় প্রাণ দাসের। এ সময় শাশুড়ি জোসনা রানী প্রচার করেন যে জামাই ঈদুর মারার বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
আমাদের সময়/আরডি