বাংলাদেশি সেজে বিয়ে ও চাকরি ভারতীয় যুবকের, তদন্তে প্রশাসন
ভারতের মুর্শিদাবাদের যুবক সাহের আলী সরদার ওরফে আকাশ প্রামানিক (৩৯) দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি পরিচয়ে বসবাস, বিয়ে এবং চাকরি করছেন। সম্প্রতি ঘটনাটি জানাজানি হলে রাজশাহী জুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি ভারতীয় নাগরিক কীভাবে বাংলাদেশি জন্মনিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) করেছেন তা তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন ।
জানা গেছে, ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার বনতাই ডাঙ্গাপাড়া সানি মন্দির এলাকার বাসিন্দা সাহের আলী সরদার বাংলাদেশের নাগরিক পরিচয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সংগ্রহ করেন ভুয়া তথ্য ব্যবহার করেন। ভারতে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্ম তারিখ ১৯৮৬ সালের পহেলা জানুয়ারি। বাংলাদেশে তার নতুন নাম ‘মো. আকাশ প্রামানিক’। জন্মনিবন্ধন সনদে জন্ম তারিখ ১৫ জানুয়ারি ১৯৯০ এবং ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ধোপাপাড়া গ্রাম।
অভিযোগ রয়েছে, সাত বছর আগে আত্মীয়ের বাড়িতে এসে সাহের আলী আর ফেরেননি ভারতে। মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়া সেই পরিবারকেই পরে ব্যবহার করেছেন নিজের পরিচয় বদলাতে। বর্তমানে তিনি ‘আকাশ প্রামানিক’ পরিচয়ে কক্সবাজারের রয়েল সী বিচ নামের একটি হোটেলে চাকরি করছেন।
এ ঘটনায় নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি জানিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা আসমা বেগম; যার নাম অভিযুক্ত ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রে ‘মা’ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
জানা গেছে, সাহের আলী নাম পাল্টে আকাশ প্রামানিক সেজে বাংলাদেষের জন্মনিবন্ধন পেয়েছেন ২০২০ সালের ২৩ মার্চ। আর তিনি এনআইডি পান ২০২২ সালের ২৮ জুলাই। ভারতীয় নাগরিক সাহের আলী ২০২৪ সালের ১২ জুলাই পুঠিয়ার ধোপাপাড়া গ্রামের এক মেয়েকে বিয়ে করেন। সাহের আলী বর্তমানে আকাশ প্রামানিক সেজে কক্সবাজারের রয়েল সী বিচ নামে একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করছেন।
অভিযোগকারী আসমা বেগম বলেন, ‘প্রায় সাত বছর আগে মানবিক কারণে আশ্রয়হীন ছেলে হিসেবে সাহের আলী সরদারকে আমি নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিই। সে নিজেকে অসহায় বলে পরিচয় দেয়। আমি মায়া করে থাকতে দিয়ে ছিলাম। সে আমার বাড়িতেই থাকতো। পরে জানতে পারি, সে গোপনে আমার ও আমার স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধনের তথ্য ব্যবহার করে নিজের নাম পরিবর্তন করে ‘মো. আকাশ প্রামানিক’ নামে বাংলাদেশি পরিচয়পত্র তৈরি করেছে। আমি ইউএনওকে জানিয়েছি, সে যেন আমার পরিচয় ব্যবহার করে আর না থাকে। সে যে দেশের নাগরিক, তাকে সে দেশে ফিরে যেতে হবে।’
অভিযোগকারী আরও বলেন, ‘সে কাজ করে কিছু টাকা জমায় এবং পরে আলাদাভাবে বসবাস শুরু করে। সে নাটোরে গিয়ে নিজেকে আমার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র করেছে। তার ব্যবহৃত সিমও আমার নামে তোলা ছিল। সে এদেশেই বিয়েও করেছে। এখন আমি চাই প্রশাসন যেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।’
অন্যদিকে, অভিযুক্ত সাহের আলী সরদার ওরফে আকাশ প্রামানিক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাকে ভারত থেকে তার (আসমা দম্পতি) বাংলাদেশে নিয়ে আসে এবং তারাই এসব কাগজপত্র তৈরি করে দেয়। আমি কোনো প্রতারণা করিনি। আমি এতিম ছিলাম। পরে তারা আমাকে মৌখিকভাবে দত্তক নেয়। তাদেরই উদ্যোগে আমার জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র করা হয়। আমি জানতাম না এতে কোনো সমস্যা হবে। তবে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। হয়তো ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকেই তারা এমন অভিযোগ করছে।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিয়াকত সালমান বলেন, ‘জেলা প্রশাসন থেকে তদন্তের নির্দেশনা এসেছে। উপজেলা কৃষি অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেবেন। প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি অফিসার স্মৃতি রাণী সরকার বলেন, ‘তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি ভারতের নাগরিক। তিনি স্থানীয়দের পরিচয় ব্যবহার করে জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি সংগ্রহ করেছেন। তদন্ত শেষ হলে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হবে।’
তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে আকাশ প্রামানিকের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব বাতিলসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে যারা তার পরিচয়পত্র তৈরিতে সহযোগিতা করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমাদের সময়/আরডি