ট্রাম্পের কোরিয়া সফরের আগ মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৭
শেয়ার :
ট্রাম্পের কোরিয়া সফরের আগ মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দক্ষিণ কোরিয়া সফরের আগ মুহূর্তে নতুন করে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। 

বুধবার (২৯ অক্টোবর) দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ জানায়, ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ায় পা রাখার একদিন আগে কোরীয় উপদ্বীপের পশ্চিম উপকূলে সাগর থেকে স্থলভাগে ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়।

কেসিএনএ আরও জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিক্ষেপ করার পর পূর্বনির্ধারিত পথে প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় উড়ে নির্ধারিত লক্ষ্যে নিখুঁতভাবে আঘাত হানে।

বর্তমানে এশিয়া সফরে আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার (২৯ অক্টোবর) দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছানোর পর তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। 

দেশটিতে ট্রাম্প এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনে যোগ দেবেন এবং বক্তব্য দেবেন বলে জানা গেছে। 

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং-এর দপ্তর জানিয়েছে, তিনি গিয়ংজুর ঐতিহাসিক জাদুঘরে ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানাবেন। প্রাচীন প্রাসাদ ও রাজকীয় সমাধির জন্য বিখ্যাত এই শহরে দুই নেতা সামরিক গার্ড পরিদর্শন করবেন। এরপর কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকার জন্য ট্রাম্পকে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে সম্মাননা জানাবেন লি।

এদিকে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা তদারকি করা উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা পাক জং চোন এ বিষয়ে বলেন, ‘নিউক্লিয়ার ফোর্স বা পরমাণু বাহিনীর উন্নয়নে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করছি।’

পাক আরও বলেন, ‘এই পরীক্ষার লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন কৌশলগত আক্রমণক্ষম অস্ত্রের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই এবং শত্রুদের সামনে আমাদের সক্ষমতা প্রদর্শন করা।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘নিউক্লিয়ার যুদ্ধ-প্রস্তুতি আরও শক্তিশালী করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।’

দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ (জেসিএস) জানায়, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টার দিকে উত্তর কোরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জলসীমা থেকে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিক্ষেপের প্রস্তুতি তারা শনাক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বিতভাবে ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্লেষণ চলছে এবং যেকোনো উসকানির জবাবে পালটা প্রতিক্রিয়া দেওয়ার জন্য যৌথ প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি বজায় রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়া স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষাও চালায়। দেশটি জানিয়েছিল, এসব ক্ষেপণাস্ত্র নতুন হাইপারসনিক প্রযুক্তির অংশ, যা তাদের পারমাণবিক প্রতিরোধক্ষমতা আরও জোরদার করবে।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানকালে তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাতে আগ্রহী। তবে সিউল জানিয়েছে, এমন বৈঠকের সম্ভাবনা খুবই কম।

কিম আগেও বলেছেন, ‘ট্রাম্পের সঙ্গে তার সুন্দর স্মৃতি আছে। কিন্তু তিনি কেবল তখনই আলোচনায় বসবেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগের দাবি থেকে সরে আসে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ব্যর্থ পারমাণবিক কূটনীতির পর থেকে পিয়ংইয়ং ওয়াশিংটন ও সিউলের সঙ্গে সব ধরনের আলোচনাই বন্ধ রেখেছে।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার আগে মঙ্গলবার ট্রাম্প ছিলেন জাপানে, যেখানে তিনি উত্তর কোরিয়া কর্তৃক অপহৃত জাপানি নাগরিকদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। 

সেখানে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের পাশে আছি।’

উত্তর কোরিয়া ২০০২ সালে স্বীকার করে, তারা ১৩ জন জাপানি নাগরিককে অপহরণ করে এজেন্ট প্রশিক্ষণের কাজে লাগিয়েছিল। আর জাপানের দাবি, মোট ১৭ জন নাগরিককে অপহরণ করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে পাঁচজনকে পরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। 

উত্তর কোরিয়া বলেছে, আটজন মারা গেছে এবং বাকি চারজন কখনো দেশটিতে প্রবেশই করেননি।

আমাদের সময়/আরআর