সনদ বাস্তবায়ন সুপারিশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫৩
শেয়ার :
সনদ বাস্তবায়ন সুপারিশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের কাজে ইতি টেনেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোটের সুপারিশ করেছে কমিশন। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত দেবে কীভাবে বাস্তবায়ন হবে। তবে এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ রয়েই গেছে। এ অবস্থায় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতিবিদরা। তাদের মতে, ঐকমত্য কমিশন দীর্ঘ সময় ধরে কতগুলো বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছে, এটা অনেক বড় সাফল্য। এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে সনদের পক্ষে গণভোট কীভাবে কখন হবে। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত দিয়েছেন রাজনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘নোট অব ডিসেন্ট’ না রাখা সঠিক সিদ্ধান্ত। ঐকমত্য কমিশন ভালো কাজ করেছে। ঝামেলাটা শুধু গণভোট নিয়ে। এখন রুলসটা দেবে নির্বাহী বিভাগ। উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্তটা নেবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি উপদেষ্টা পরিষদ সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের আদেশটা দেবে। ঐকমত্য কমিশন যা করেছে খুব ভালো কাজ করেছে। বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করেছে, যা আগে কখনও ছিল না।

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আমাদের সময়কে বলেন, আমরা যেসব দল ঐকমত্য কমিশনে মতামত দিয়েছি, তাদের মধ্যে অধিকাংশ দলের মতামত ছিল গণভোটে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রাখার সুযোগ নেই। কাজেই কমিশন যে সুপারিশ করেছে তা যুক্তিযুক্ত। কিন্তু ২৭০ পঞ্জিকা দিবসে কার্যকর না হলে গৃহীত হয়েছে বলে গণ্য হবে, এটা ঠিক না। সংবিধান সংস্কারের মতো বিষয়ে এভাবে অটো কার্যকর পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো অতীত রেকর্ড নেই। তিনি বলেন, গণভোটের বিষয়ে অধিকাংশ দলের মতামত ছিল সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট হতে হবে। কমিশন দুটি বিকল্প রেখেছে। যেহেতু আমরা অধিকাংশ দল মতামত দিয়েছিলাম ভোটের দিন গণভোট আয়োজনের জন্য, কমিশনের উচিত ছিল বাস্তবায়ন সুপারিশে সেটা উল্লেখ করা। এ বিষয়ে কমিশনের সুনির্দিষ্ট সুপারিশ থাকা বাঞ্ছনীয় ছিল।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, জুলাই জাতীয় সনদের (সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫) যে খসড়া প্রকাশিত হয়েছে তাতে ভাষার গাম্ভীর্য আছে এবং গণ-অভ্যুত্থানকে ‘সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন ও জনগণের পরম অভিপ্রায়ের প্রকাশ’ বলে স্বীকার করা হয়েছে। এটা সাধুবাদযোগ্য। তবে কিছু প্রশ্নে এখনও অস্পষ্টতা রয়েছে, যা আগামীর রাজনীতিকে কঠিন করে তুলতে পারে।

অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ বলেন, খসড়ায় আদেশ কে দেবে স্পষ্ট করা হয়নি। আদেশ জারির কারণ হিসেবে ‘জনগণের জ্ঞাতার্থে ও সাংবিধানিক পরিষদের দায়িত্ব সম্পাদনের সুবিধার্থে’ উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ হলো, এই আদেশের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকছে না। তিনি বলেন, সমঝোতার স্বার্থে এই আদেশকে সাংবিধানিক আদেশের মর্যাদা থেকে নামিয়ে আনুষ্ঠানিক আদেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এটা এই আদেশকে জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো একটি অকার্যকর কাগুজে আদেশে পরিণত করার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তা ছাড়া আদেশে গণভোট কখন হবে তাও স্পষ্ট করা হয়নি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করে, গণভোট অবশ্যই জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত হতে হবে।