কারখানা খোলার দাবিতে মহাসড়কে বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৪৯
শেয়ার :
কারখানা খোলার দাবিতে মহাসড়কে বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ

হঠাৎ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের ঘোষণার পরপরই ফের চালু করা ও বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। এ সময় তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে যান চলাচল আটকে দেয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় মহাসড়কের দুইপাশে প্রায় ২০ কিমি দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এতে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন চালক ও যাত্রীরা।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের জৈনাবাজার এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এ সময় শ্রমিকরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক ও পুলিশ সূত্র জানায়, এএ ইয়ার্ন ডাইং লি. নামের একটি কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে তিন দফা আন্দোলন করেছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা একাধিকবার কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর করেছে।

এর আগে গত রবিবার কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার সকালে শ্রমিকরা এসে দেখতে পায় কারখানা বন্ধের নোটিশ। এতে শ্রমিকরা কারখানর মূল ফটকে অবস্থান করে বিক্ষোভ করে। গতকালের মতো আজ মঙ্গলবার সকালেও শ্রমিকরা কারখানার সামনে বিক্ষোভ করে।

একপর্যায়ে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। কিন্তু এক ঘণ্টা মহাসড়ক স্বাভাবিক থাকার পর শ্রমিকরা ফের মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও বর্জ্য ফেলে আগুন ধরিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এতে মহাসড়ক আবারও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

শ্রীপুর থানা ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।

এ বিষয়ে ওই কারখানার মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন বলেন, ‘২৩ অক্টোবর শ্রমিকরা বেতন দাবি করে কারখানার ভেতর ব্যাপক ভাঙচুর করে। এতে কারখানা চালু রাখা সম্ভব নয়। নতুন যন্ত্র সংযোগ করে কারখানা চালু করতে হবে। যে কারণে মালিকপক্ষের সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ধারা ১৩(১) অনুযায়ী কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’

শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল লতিফ খান বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরেই কারখানায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করলেও আজ তারা মহাসড়ক অবরোধ করে। তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নিতে আমরা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করি। কিন্তু শ্রমিকরা দফায় দফায় রাস্তায় নেমে অবরোধ সৃষ্টি করে।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ‘জৈনাবাজার এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এএ ইয়ার্ন কারখানার শ্রমিকরা অবরোধ করেছিল। শ্রমিকরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে যান চলাচলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার একপর্যায়ে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে দেয়।’

বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে ওই কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। দফায় দফায় শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে কতৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনা টাকা পরিশোধ না করে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।’