ফারইস্টের নজরুলের ২০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ
অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম অঢেল সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে নজরুলের একটি বাড়ি রয়েছে। তিনি ও তাঁর পরিবারের সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এ ছাড়া ঢাকার বারিধারা, গুলশান, বসুন্ধরা, নিকুঞ্জ, মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ী, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় তাঁর একাধিক বাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট, জমিসহ ২০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে।
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩১ জুলাই নজরুল ইসলামসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ২৩ অক্টোবর রাজধানীর বংশাল থেকে গ্রেপ্তার করার পর তাঁকে এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। গতকাল রিমান্ড শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া তাঁর নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আরও ছয়টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার তদন্ত চলছে।
এদিকে ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি নজরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম জানান, অনুসন্ধানে নজরুল ইসলামের বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে দেশ-বিদেশে এসব সম্পদ থাকার কথা স্বীকারও
করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
দুদক জানায়, নজরুল ইসলাম ২০১৫ সালে ৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার (পৌনে ৭ কোটি টাকা) বাংলাদেশ থেকে পাচার করে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েলিংটনে একটি বাড়ি কিনেছেন।
দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বারিধারায় ৮ কাঠা জমির ওপর পুতুল হাউস নামে একটি ট্রিপ্লেক্স হাউস রয়েছে নজরুলের; বিদেশিদের ভাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়িটি কিনেছেন। গুলশান-১ এ ভাসাবির পেছনে ৩২০০ বর্গ ফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে, বারিধারায় ডিএইচওএসে ২৮৪১ বর্গ ফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে; গুলশান-২ এ ৫ কাঠার উপরে দোতলা ভবনসহ অফিস, বসুন্ধরায় ২০/৩/৫ ব্লক-জি’র সায়েম সোবহান রোডে ৩৬০০ বর্গ ফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া নিকুঞ্জে পুতুল হাউস নামে ৩ কাঠার ওপর একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি, মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ীতে ২ কোটি টাকা মূল্যের প্লট (দখলে নেই), নারায়ণগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়ায় যৌথ মালিকানায় প্রাইম শপ নামে ১৮ কোটি টাকা বিনিয়োগে একটি কোম্পানি, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে আলু কেনা ও চাষাবাদের জন্য বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছেন তিনি।
অন্যদিকে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, ফারইস্ট ইসলামী সিকিউরিটিজ, ফারইস্ট ইসলামী প্রোপার্টিজ, সিভিসি ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্সসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নজরুল ইসলামের নামে প্রায় ২০ কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ যে, ২০১৪ সালে ফারইস্টের নামে (৩৬, তোপখানা রোড) ২০৭ কোটি টাকার জমি কেনার সময় অন্যদের সঙ্গে ২৮ কোটি টাকা ভাগাভাগি হয়, যার মধ্যে তিনি ৬ কোটি টাকা পান। ওই জমি বিক্রেতা আজহার হোসেন খানের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায় জড়ান নজরুল। জমি বিক্রেতা থেকে নিজের ব্যাংক হিসাবে ১০ কোটি ও স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করে পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটি থেকে ফারইস্টের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এমএ খালেক নিজ ও পরিচিত লোকদের মালিকানায় থাকা ১১টি প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে ৫৯১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। ওই অর্থ আত্মসাতে সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামসহ অন্যরা জড়িত। এমএ খালেক, তাঁর ছেলে শাহরিয়ার খালেদ, প্রাইম ফাইন্যান্সিয়াল সিকিউরিটি, পিএফআই সিকিউরিটিজ, প্রাইমেশিয়া ইউনিভার্সিটি, প্রাইমেশিয়া ফাউন্ডেশন ইত্যাদি কোম্পানি দেখিয়ে ঋণের নামে এই অর্থ আত্মসাৎ করেন।
এদিকে নজরুল ইসলাম ঢাকা বোট ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাবসহ ১৪টি ক্লাবের সদস্য। ২০১৬ সালে ১০ লাখ টাকা দিয়ে সদস্য হোন। বারিধারা ক্লাবে ২ লাখ টাকা দিয়ে সদস্য হোন।
দুদকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, নজরুল ইসলামের বিপুল পরিমাণ সম্পদের অধিকাংশই অবৈধ উপায়ে অর্জিত। তিনি বিদেশেও অর্থ পাচার করেছেন। এ বিষয়ে তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর নামে মামলার প্রস্তুতি চলছে।