সালমান শাহ হত্যাকাণ্ড: সামিরা ও ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

আদালত প্রতিবেদক
২৭ অক্টোবর ২০২৫, ২০:১৯
শেয়ার :
সালমান শাহ হত্যাকাণ্ড: সামিরা ও ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ছবি : সংগৃহীত।

চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলার আসামি তার সাবেক স্ত্রী সামীরা হক এবং খলনায়ক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্টোপলিটন মাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামান এ আদেশ দিয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার ইন্সপেক্টর আতিকুল ইসলাম খন্দকার তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছিলেন।

এর আগে গত ২০ অক্টোবর সালমান শাহর মামা মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার অপর আসামিরা হলেন- সামীরা হকের মা লতিফা হক লুছি, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, লতিফা হক লুসি, ডেবিট, জাভেদ, ফারুক, রুবী, আ. ছাত্তার, সাজু, রেজভি আহমেদ ওরফে ফরহাদ।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়ক সালমান শাহ (চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন) ঢাকার ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে মারা যান। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে সে সময় তার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে।

ছেলের মৃত্যুর পর প্রথমে একটি অপমৃত্যু মামলা করেন সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। কিন্তু পরে ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে- এমন অভিযোগে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করার আবেদন জানান তিনি।

তখন অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেয় আদালত। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সিআইডি জানায়, সালমান শাহ ‘আত্মহত্যা’ করেন।

সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমরউদ্দিন চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত।

দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সেই প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্টোপলিটন মাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। তাতেও হত্যার অভিযোগ নাকচ করা হয়।

সালমান শাহের বাবার মৃত্যুর পর তার মা নীলা চৌধুরী মামলটি চালিয়ে যান। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ দেন। তিনি ১১ জনের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, এরা তার ছেলেকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

মামলাটি এরপর তদন্ত করে র‌্যাব। তখন রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি তুললে ২০১৬ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েশ র‌্যাবকে মামলাটি আর তদন্ত না করার আদেশ দেন।

তখন তদন্তের দায়িত্বে আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চার বছর তদন্তের পর ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারা অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়নি মর্মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়।

‎সেখানেও বলা হয়, ঘটনার সময় উপস্থিত ও ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি বিশ্লেষণ করে, জব্দ করা আলামত পর্যালোচনা করে হত্যার অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।

পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদনে বলে, চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে পারিবারিক কলহ আর স্ত্রী সামিরা হকের কারণে মা নিলুফা চৌধুরী ওরফে নীলা চৌধুরীকে ছেড়ে থাকার মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেই অভিমানী সালমান শাহ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।

‎ওই প্রতিবেদনেও সন্তুষ্ট না হয়ে নীলা চৌধুরী আরও তদন্ত চান। কিন্তু ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন।

‎এরপরই আবার সালমান শাহর পরিবার মহানগর দায়রা জজ আদালতে ২০২২ সালে রিভিশন আবেদন করেন।

‎গত ২০ অক্টোবর ঢাকার ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক রিভিশন   আবেদন মঞ্জুর করেন। এবিষয়ে সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিনের অভিযোগ এবং ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে রমনা থানায় হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী রাতে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

আমাদের সময়/কেইউ