‘টাকা পাঠাতে দেরি করলে মামলা হবে’—এসআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ

নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:০০
শেয়ার :
‘টাকা পাঠাতে দেরি করলে মামলা হবে’—এসআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ

ফরিদপুরে ‘মেজর আতঙ্ক’ দেখিয়ে আটক এক যুবকের পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নগরকান্দা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) নগরকান্দা থানায় ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী যুবকের নাম ইমদাদুল শেখ (২৭)। তিনি উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের শশা গ্রামের কৃষক ইকতার শেখের পরিবার।

পরিবারের সদস্যরা জানান, শুক্রবার ইমদাদুল তার প্রতিবেশী জিসান মাতুব্বরের কাছে ২ হাজার ৫০০ টাকা পাওনা ছিলেন। জিসান জানান, তালমা মোড়ের একটি বিকাশ দোকানে গেলে সেখানে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে, এর মধ্যে নিজের পাওনা রেখে বাকিটা পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটে বিপত্তি।

বিকাশ দোকানদার মিন্টু খন্দকার বলেন, ‘একজন নিজেকে ‘মেজর’ পরিচয় দিয়ে ফোন করে বলেন,‘‘যে ছেলেটি টাকা নিতে আসছে, তাকে আটকান, না হলে বিপদ হবে।’’ আমি ভয় পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় থানায় খবর দিই। পরে পুলিশ এসে ছেলেটিকে ধরে নিয়ে যায়।’

এরপর ইমদাদুলকে থানায় নিয়ে যান এসআই রবিউল ইসলাম। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কোনো অপরাধের প্রমাণ না মেলায় তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা থাকলেও, এসআই টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। তারা বলেন, থানার ‘গোলঘরে’ এসআই রবিউল ইমদাদুলের মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন জিম্মি রেখে বলেন, “বিষয়টা এখন আমার হাতে নেই, মেজর আসিফ নামের একজন এটি দেখছেন।”

এরপর রবিউল নিজের মোবাইল ফোনে পরিবারের সঙ্গে কথিত ‘মেজর আসিফ’-এর কথা বলিয়ে দেন। ওই ব্যক্তি ছেলেকে ছাড়ানোর জন্য ৬০ হাজার টাকা দাবি করেন। রবিউল দুইটি বিকাশ নম্বর দেন এবং বলেন, “টাকা পাঠাতে দেরি করলে মামলা হবে, এখনই পাঠান।”

পরিবার আতঙ্কে পড়ে তড়িঘড়ি করে দুটি বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দেয়। টাকা পাঠানোর কিছুক্ষণ পর ইমদাদুল ও তার মোটরসাইকেল ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে মোবাইল ফোনটি ফেরত দেওয়া হয়নি।

ভুক্তভোগী ইমদাদুল শেখ বলেন, ‘আমি প্রতিবেশী জিসানের কাছে ২৫০০ টাকা চাইতে গিয়েছিলাম। সে আমাকে বিকাশের দোকানে ডেকে নিয়ে ফাঁদে ফেলে জাল টাকার ব্যবসায়ী বলে পুলিশে দেয়।’

ইমদাদুলের মা শিল্পী বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে থানায় নিয়ে গিয়ে রবিউল স্যার নানা মামলা দেওয়ার ভয় দেখান। আমরা ভয়ে বিকাশে টাকা পাঠাই। এখন তারা মুখ না খোলার হুমকি দিচ্ছে।’

ভুক্তভোগীর বাবা ইকতার শেখ বলেন, ‘রবিউলের ভয়েই আমি নগরকান্দা বাজারের বাবুর বিকাশ দোকান থেকে দুইটি নম্বরে ৬০ হাজার টাকা পাঠিয়েছি। টাকা পাঠানো শেষ হতেই ছেলে আর মোটরসাইকেল ছাড়েন, কিন্তু ফোন ফেরত দেননি।’

অভিযুক্ত প্রতিবেশী জিসান মাতুব্বরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে এসআই রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বিকাশ ব্যবসায়ী ফোনে জানিয়েছিলেন, তারা একজন জাল টাকার ব্যবসায়ীকে ধরেছেন। আমি গিয়ে থানায় নিয়ে আসি। পরে কিছু না পেয়ে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিই। মেজর পরিচয়ে টাকার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

তবে ভুক্তভোগী পরিবার দাবি করছে, রবিউলের ফোন থেকেই কথিত ‘মেজর আসিফ’-এর সঙ্গে কথা হয়েছিল এবং তার পরেই টাকা পাঠানো হয়।

নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, ‘জাল টাকার অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছিল, কিন্তু সত্যতা না পাওয়ায় মুচলেকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। টাকার লেনদেনের বিষয়ে এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আমাদের সময়/আরডি