প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ১২ বছর শিকলবন্দী মামুনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন ইউএনও
২০ বছর আগে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন সাইদুল ইসলাম মামুন। একপর্যায়ে ১২ বছর ধরে শিকলবন্দী করে রাখেন পরিবার। তবে কয়েকদিন আগে তার এমন অবস্থা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহমেদের নজরে আসে।
শিকলবন্দী মামুন বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের আইচার হাওলা গ্রামের মোসলেম উদ্দিন বেপারির ছেলে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) বেলা ১১টায় ইউএনও ফারুক আহমেদ মামুনের খোঁজ-খবর নেন এবং তার চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকার একটি চেক এবং নগদ এক হাজার টাকা দেন। এবং তার যাবতীয় চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।
জানা গেছে, বিগত ২৩ বছর আগে সাইদুল ইসলাম মামুন সরকারি বাবুগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়মিত একজন ছাত্র ছিলেন। তখন একই বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর (সুখি আক্তার) সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একসময় তাদের সম্পর্কের কথা সুখির পরিবার জানতে পারে। পরে মামুনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে মেয়েটির পরিবার এবং মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতেই মামুন ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। সেই থেকে মামুন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন। একপর্যায়ে বিপর্যন্ত মামুনকে শিকলবন্দী করে রাখেন তার পরিবার। গত ১২ বছর যাবৎ পায়ে শিকল পরিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় মামুনকে।
মামুনের মা সোনাবান বেগম বলেন, ‘২০০২ সালে সরকারি বাবুগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় পড়াশোনা চলাকালীন সিংহেরকাঠি গ্রামের আলমগীর হোসেনের মেয়ে সুখির সঙ্গে পরিচয় হয় মামুনের। একপর্যায় তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। কিন্তু সুখির পরিবার জানতে পেরে মামুনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এবং সুখি সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতেই মামুন ধীরে ধীরে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে যায়। একপর্যায়ে মামুন পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। তাই বিগত ১২ বছর আগে তার পায়ে শিকলবন্দী করে ঘরে আটকে রেখেছি। ইউএনও স্যার আশ্বাস দিয়েছেন তার চিকিৎসাবহণ করবেন। এবং আজ ১০ হাজার টাকার একটি চেক এবং নগদ এক হাজার টাকা মামুনের চিকিৎসার জন্য দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ ইউএনও ফারুক আহমেদ বলেন, ‘ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। খুবই দুঃখের বিষয়। মামুন মানসিক ভারসাম্যহীন থেকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসুক এই প্রত্যাশা করছি। এবং তার চিকিৎসার জন্য অর্থ প্রদান করা হয়েছে। এবং ভবিষ্যতে তার চিকিৎসার জন্য অর্থ প্রদানের চেষ্টা করব।’
আমাদের সময়/আরডি