টুপি পরা নিয়ে বিরোধ /
ঘুমন্ত মাদ্রাসাছাত্রকে জবাই করে হত্যা
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে এক মাদ্রাসাছাত্রকে ঘুমন্ত অবস্থায় জবাই করে হত্যার এক লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে টুপি পরা নিয়ে সামান্য বিরোধের জেরে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে ঘটনার পরপরই ঘাতক অভিযুক্ত ছাত্রকে হাতেনাতে আটক করতে সক্ষম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সোমবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম।
এর আগে রোববার (২৬ অক্টোবর) দিবাগত গভীর রাতে সোনাইমুড়ী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাটরা এলাকার আল মাদরাসাতুল ইসলামিয়া মাখফুনুল উলুম মাদ্রাসার আবাসিক ভবনে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
নিহত ছাত্রের নাম মো. নাজিম উদ্দিন (১৩)। সে উপজেলার চাষীরহাট ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের ওবায়েদ উল্ল্যার ছেলে। নাজিম মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্র ছিল এবং পবিত্র কোরআনের ২২ পারা হেফজ সম্পন্ন করেছিল।
অন্যদিকে আটক ছাত্রের নাম আবু ছায়েদ (১৬)। তার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার টেঙ্গাপাড়া গ্রামের রুস্তম আলীর ছেলে। ছায়েদও আবাসিক ছাত্র ছিল এবং নাজিমের চেয়ে এক পারা বেশি অর্থাৎ ২৩ পারা কোরআন হেফজ সম্পন্ন করেছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাজিম ও ছায়েদ একই মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্র হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে একই কক্ষে বসবাস করত। তারা উভয়েই কোরআনের হাফেজ। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে টুপি পরা নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে সামান্য তর্কাতর্কি হয়। মাদ্রাসার শিক্ষকরা সে সময় তাদের বিরোধ মীমাংসা করে দিলেও ছায়েদের মনে সেই ক্ষোভ চেপে ছিল। পুরনো বিরোধের জেরে প্রতিশোধ নিতে সে সোনাইমুড়ী বাজার থেকে ৩০০ টাকায় একটি ধারালো ছুরি কিনে রাখে।
রোববার গভীর রাতে নাজিম, ছায়েদসহ মোট ১৪ জন ছাত্র ও একজন শিক্ষক একই কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে ঘুম থেকে উঠে ছায়েদ। এরপরই সে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা নাজিমের গলায় সেই ধারালো ছুরি চালায়।
হঠাৎ নাজিমের গোঙরানির শব্দে কক্ষের অন্যান্য ছাত্র ও শিক্ষক ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। তারা ছুটে এসে দেখেন, নাজিম রক্তে ভেসে যাচ্ছে আর ছায়েদ ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গেই মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে ভোররাতেই সোনাইমুড়ী থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম এই ভয়াবহ ঘটনা সম্পর্কে বলেন, খবর পেয়ে ভোররাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো ছুরিটি উদ্ধার করা হয়েছে এবং নৃশংসতার অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্র আবু ছায়েদকে তাৎক্ষণিক আটক করা হয়।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে ছায়েদ টুপি পরা নিয়ে পুরনো বিরোধের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। এই বয়সের একজন ছাত্রের মধ্যে এমন চরম ক্ষোভের জন্ম নেওয়া এবং তা এমন নির্মমভাবে বাস্তবায়ন করাটা সত্যিই অত্যন্ত দুঃখজনক।
ওসি জানান, নিহত ছাত্র নাজিম উদ্দিনের মরদেহ সুরতহাল শেষে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
আমাদের সময়/এএস