দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কী আরও কমবে?

অনলাইন ডেস্ক
২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫৪
শেয়ার :
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কী আরও কমবে?

গত কয়েক বছর ধরেই দেশের বাজারে বেশ ঘন ঘন ওঠানামা করছে স্বর্ণের দাম। তবে যে পরিমাণ কমে, তার চেয়ে বেশি বাড়ে। গত এক বছরের হিসেবে দেখা যাচ্ছে ভালো মানের ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণের দর বেড়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে স্বর্ণের দাম নিম্নমুখি।

হঠাৎ করেই গত ২৩ অক্টোবর প্রতি ভরিতে স্বর্ণের দাম সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা পর্যন্ত কমানো হয়। ওইদিন ভালো মানের ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণে দাম নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৮ হাজার ৯৯৬ টাকা। এর মাত্র চারদিন পর আরও কমানো হলো স্বর্ণের দাম।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সোমবার (২৭ অক্টোবর) থেকে প্রতি ভরিতে সর্বোচ্চ এক হাজার ৩৯ টাকা পর্যন্ত স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৭ হাজার ৯৫৭ টাকা। 

টানা কিছুদিন স্বর্ণের দাম বাড়ার পর এখন আবার কমতে শুরু করার কারণ কী? বাজুসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যেল সঙ্গে সমন্বয় রাখার জন্যেই স্বর্ণের দাম বাড়ানো কমানো হয়।

সত্যিই কী আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশীয় বাজারের স্বর্ণের দামের সমন্বয় আছে? আন্তর্জাতিক বাজারদর পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববাজারের তুলনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ভরি প্রতি স্বর্ণের দামে ৭০ হাজার টাকারও ব্যবধান রয়েছে। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশি দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের তুলনায় বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম অনেক বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের স্পট মার্কেটে সর্বশেষ প্রতি আউন্স (২৮.৩৪৯৫ গ্রাম) ২২ ক্যারেট স্বর্ণ সর্বনিম্ন ৩ হাজার ৩৩৪ ডলারে কেনাবেচা হচ্ছে। ডলারের বিনিময় মূল্য ১২২ টাকা দরে প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৫১ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে। অর্থাৎ দেশে প্রতি ভরি স্বর্ণ অন্তত ৪০ হাজার টাকা বেশি দরে কেনাবেচা হচ্ছে।

ভারতীয় বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট পোর্টাল এনজেলওয়ানের তথ্য অনুযায়ী, ওই দেশের জুয়েলার্স সমিতির বেঁধে দেওয়া বাজারদর অনুযায়ী, গতকাল প্রতি গ্রাম ২২ ক্যারেট স্বর্ণ কেনাবেচা হয়েছে ৯ হাজার ৮৯ রুপিতে। রুপির বিনিময় মূল্য ১ টাকা ৪৩ পয়সা হিসাবে প্রতি ভরির দাম ভারতে ১ লাখ ৫২ হাজার ৬৬১ টাকা। এই হিসাবে বাংলাদেশে ভারতের চেয়ে ভরিতে ৫০ হাজার টাকারও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ।

দুবাই জুয়েলারি গ্রুপের ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভ্যাট ও মজুরি ছাড়া ২২ ক্যারেট মানের স্বর্ণে ভরির দাম ৫ হাজার ২৬৯ দিরহাম, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ২৫৪ টাকা। অর্খাৎ বাংলাদেশের চেয়ে সেখানে স্বর্ণের দাম ভরি প্রতি প্রায় ৩৩ হাজার টাকা কম।

দেশে দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে আসছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। বৈশ্বিক বাজারে দাম বাড়লে বা কমলে সমিতির নেতারা তার ভিত্তিতে দেশীয় বাজারে স্বর্ণের দর সমন্বয় করেন বলে দাবি করে থাকেন। কিন্তু কোন যুক্তিতে বা মানদণ্ডের ভিত্তিতে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়? এ নিয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে বাজুসের সহসভাপতি মাসুদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে বা কমলে দেশে এর প্রভাব পড়ে। এখানে বাজুসের কোনো কৌশল নেই। স্বর্ণের বাজারে বর্তমানে মন্দাভাব চলছে। গত কয়েক বছরে বিক্রি কমে অর্ধেকে নেমেছে। এখন দাম কমতে থাকায় হয়তো বিক্রি বাড়বে। 

অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশের বাজারে দাম কীভাবে সমন্বয় করা হয়, তা অস্পষ্ট। এতে মূলত ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও ক্রেতারা ঠকছেন। এই পরিস্থিতিতে দাম নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট কাঠামো দাঁড় করানো এবং আমদানির ক্ষেত্রে কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নের পরামর্শ দেন তারা।

এদিকে টানা কয়েক দফা স্বর্ণের দাম বাড়ার পর দেশীয় বাজারে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে স্বর্ণের দাম ভরি প্রতি ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমানো হয়। এর চারদিন পর সোমবার (২৭ অক্টোবর) থেকে প্রতি ভরিতে সর্বোচ্চ এক হাজার ৩৯ টাকা কমানো হলো। প্রশ্ন ওঠেছে স্বর্ণের দাম কি আবার বাড়বে নাকি কমতেই থাকবে? বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণে বিনিয়োগ কতটা নিরাপদ বা ঝুঁকিপূর্ণ?

এই আলোচনায় বিশ্লেষকরা স্বর্ণের দাম কমতে থাকার বিষয়টিকেই সামনে আনছেন। বিশ্ব অর্থনীতি ও যুদ্ধ পরিস্থিতি, বাণিজ্যিক মন্দাভাবসহ নানা বিষয়ের প্রভাবে স্বর্ণের দাম আরও কমতে পারে। পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কবাণিজ্য যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে ডলারের অবনমন স্বর্ণের দামে প্রভাব ফেলতে পারে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। 

এদিকে দেশের স্বর্ণ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বেশ কিছুদিন ধরে বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশে স্বর্ণের দরের বড় ফারাকের বিষয়টি নিয়ে শোরগোল তুলেছেন। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের দেশে স্বর্ণের দাম বেশি হওয়ায় মানুষ স্বর্ণ কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছে।এতে ধস নেমেছে তাদের ব্যবসায়। সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাজুসের এক সভায় বিষয়টি আলোচনায় আনা হয়। এসময় নেতারা এই অসঙ্গতি কমাতে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। এ অবস্থায় বিশ্ব বাজারে স্বর্ণের দামের বড় উত্থান না হলে আগামীতে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আরও কয়েক দফা কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ অবশ্য বলছেন, স্বর্ণের বাজারে ধারাবাহিক অস্থিরতার কারণে এ বিষয়ে সঠিক ধারণা দেওয়া বেশ কঠিন। তারা মনে করছেন, অতীত অভিজ্ঞতা এবং বাজার প্রবণতা বিবেচনায় স্বর্ণের দাম আগামী কয়েক বছরে খুব বেশি কমার সম্ভাবনা নেই । বরং স্বর্ণের দাম আবারও বাড়তে শুরু করবে বলেই মনে করছেন তারা।


আমাদের সময়/ ওএইচ